ঢাকা: জেল হত্যা (জাতীয় চার নেতা হত্যা) মামলায় চূড়ান্ত রায়ে পলাতক দুই আসামি এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এ দু’জনের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের অংশ বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রায় ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত জেল হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। এর আগে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, “এখানে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা প্রমাণিত হয়েছে। তাই দুই আসামির বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ের অংশ বাতিল ও বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখা হলো।” আপিলে রাষ্ট্রপক্ষও জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিষয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত চেয়েছিলেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যদায়) আনিসুল হক দু’জনের খালাস পাওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উল্লেখ করেন। ষড়যন্ত্রে অংশ হিসেবেই চারজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল বলে তিনি দাবি করেন। এ কারণে সে ব্যাপারেও তিনি সর্ব্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চান।
আনিসুল হক শুনানিতে আরও বলেছিলেন, “যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও দু’জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই রায় বিকৃত এবং আইন বহির্ভূত ছিল বলে আমরা মনে করি। সেই প্রশ্নেই আমাদের মূল বক্তব্য। এছাড়া চারজন রাজনীতিবিদকে হত্যার ঘটনার পেছনে যে ষড়যন্ত্র ছিল, তাতেও আমরা আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত চাইছি।” যে দু’জনের হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ার ঘটনা আপিল বিভাগে গড়ায় তারা পলাতক থাকায় আদালত তাদের পক্ষে ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আইনজীবী নিয়োগ করেন। ব্যারিস্টার মামুন শুনানিতে বলেছিলেন, তার মক্কেলরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে হাইকোর্ট তাদের খালাস দিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকেও সবাই যে অব্যাহতি পেয়েছিলেন, সে ব্যাপারেও রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সঙ্গে সিদ্ধান্ত চেয়েছেন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী একবার কেউ খালাস বা শাস্তি পেলে নতুন করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যায় না।”
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিচারিক আদালতের রায় বহাল তথা দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধার ফাঁসির আরজি জানান। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ওই দু’জনের খালাস প্রার্থনা করেন আসামিপক্ষ। উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের আইনজীবী। জেল হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়া দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা পলাতক থাকায় আপিল বিভাগ তাকে সরকারি খরচে ওই দুই আসামির আইনজীবী নিযুক্ত করেন।