নিউজডেস্ক : হরতালে পরিবহন বন্ধ থাকায় এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে জ্বালানি তেলের আমদানি কমছে। এর ফলে এ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা, যাতে সাশ্রয় হবে বিদেশি মুদ্রার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের হিসাবে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সাত থেকে আট লাখ টন জ্বালানি তেল কম আমদানি করতে হবে। জ্বালানি তেল আমদানি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ২৭১ কোটি ১২ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ কম। ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
জ্বালানি তেল আমদানি কমে যাওয়ার বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান ইউনূসুর রহমান বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দেশে একের পর এক হরতাল হচ্ছে। এ কারণে ডিজেলের চাহিদা কমে যাচ্ছে। “আমাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন দেশে ১২ থেকে ১৩ হাজার টন ডিজেলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু হরতাল থাকলে সে চাহিদা ৫ থেকে ৬ হাজার টনে নেমে আসে।” হরতালে বাস-ট্রাক-লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহন বন্ধ থাকায় ডিজেলের পাশাপাশি পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদাও কমে যায় বলে জানান বিপিসি প্রধান।ইউনূসুর রহমান বলেন, “লোডশেডিং কমায় বাসা-বাড়ি-কলকারখানায় জেনারেটরে প্রচুর ডিজেল ব্যবহৃত হত, যা এখন কমেছে। একই কারণে সেচ পাম্পগুলোতেও ডিজেলের চাহিদা কমেছে।” বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৭ লাখ টন তেল আমদানি হয়। পরের অর্থবছরে ৪৮ লাখ টন আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আমদানি হয় ৫২ লাখ টন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে (রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট) অতিরিক্ত ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল সরবরাহের কারণে গত অর্থবছরে তেলের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। এই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানির লক্ষমাত্রা ৫৮ লাখ টন ধরা হলেও এবার ৪৪ থেকে ৪৫ লাখ টন জ্বালানি আমদানির প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন বিপিসির কর্মকর্তারা। বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, দেশের মোট জ্বালানি তেলের চাহিদার মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই ডিজেল। ইউনূসুর রহমান, “আমরা যাদের কাছ থেকে তেল আমদানি করব বলে চুক্তি করেছিলাম তাদেরকে ইতোমধ্যেই আমাদের চাহিদা কমার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।”
জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ব্যয় কমায় অর্থনীতিতে স্বস্তি বয়ে আনবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত। বাংলাদেশ উন্নয়ন অধ্যয়ন ইনস্টিটিউটের এই গবেষক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “প্রতিবছরই জ্বালানি তেল আমদানি খাতে সরকারকে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। এই যোগান দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। কিন্তু এবার আমদানি কমায় এবং কয়েক দফা দাম বাড়ানোর কারণে কম ভর্তুকি দিতে হবে।” তিনি বলেন, “জ্বালানি তেল আমদানি কমায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে এ খাতের জন্য সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণও কম নিতে হচ্ছে।” এতে করে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়বে, যার ইতিবাচক প্রভাব শিল্প খাতে ও জিডিপিতে পড়বে বলে মনে তিনি।
সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। বর্তমানে দেশে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ টাকা, পেট্টোল ৯৬ টাকা অকটেন ৯৯ টাকা, ফার্ণেস ওয়েল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, সরকার র্বতমানে প্রতি লিটার ডিজেলে ১০ টাকা ৪৩ পয়সা, কেরোসিনে ১১ টাকা ৬৫ ও ফার্নেস অয়েলে ১ টাকা ৬৬ পয়সা ভর্তুকি দিচ্ছে।