বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

লাশ গুমের অভিযোগ মিথ্যা, দুঃখজনক: জিওসি

নিউজডেস্ক : ৯ পদাতিক বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেছেন, “কিছু লোক লাশ গুমের কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, যা দুঃখজনক। লাশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমরা সর্তকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “উদ্ধার কাজ সম্পূর্ণ শেষ হলে বলা যাবে সঠিক মৃতের সংখ্যা কত।” সাভারের রানা প্লাজা ধসের উদ্ধার তৎপরতার সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। উদ্ধার তৎপরতার কন্ট্রোল রুমে সর্বশেষ তথ্য জানাতে সাভারের কন্ট্রোল রুমে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

হাসান সারওয়ার্দী বলেন, “রানা প্লাজার ভবন ধসের পর নবম পদাতিক ডিভিশন ১৯৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে।  ২৯ এপ্রিল থেকে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ডগ স্কোয়াডের কুকুরকেও এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভেতরে বেশকিছু মৃতদেহ দেখা যাচ্ছে। লাশের যেন ক্ষতি না হয় সেজন্য সর্তকতার সঙ্গে উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছি। সর্বশেষ মৃতদেহ উদ্ধার না করা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে, থেমে থাকবে না। সেনাবাহিনীও হতাহতদের জন্য একদিনের বেতন অর্থাৎ সাড়ে সাত কোটি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দান করেছে।”

তবে কবে এ কাজ শেষ হবে তা বলা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দুঃখ করে হাসান সারওয়ার্দী আরও বলেন, “কিন্ত একটি মহল লাশ গুমের নামে মিথ্যাচার করছে। ব্যথিত মানুষকে আরও উসকে দিচ্ছে।” তিনি এ সমস্ত ব্যথিত মানুষকে নিয়ে কোনো প্রকার উসকানি মূলক পরিস্থিতি তৈরি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। জিওসি আরও বলেন, “ধ্বংসস্তূপ থেকে ডাম্প ট্রাকে করে ভবনের ধ্বংসাবশেষ বংশী নদীর পাড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ডাম্প ট্রাক থেকে সেগুলো ফেলার সময় কিছু কিছু লোক লাঠি-সোটা নিয়ে ডাম্প ট্রাক আটকিয়ে উদ্ধার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।” সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বর্তমান শোকার্ত সময়ে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন। তিনি বলেন, “এখানে যারা নিহত হয়েছেন, তারা আপনাদের বা আমাদেরই কারো বাবা, কারো ভাই, কারো বোন, কারো স্বজন। আমরা চাই, তাদের মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে অক্ষত অবস্থায় স্বজনদের হাতে তুলে দিতে।” তিনি সংবাদকর্মীদের লাশ উদ্ধার থেকে শুরু করে রাবিশ ডাম্পিং হওয়া পর্যন্ত সব স্তরে সচিত্র সংবাদ পরিবেশনেরও আহ্বান জানান। বিজিএমইএ’র অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে জিওসি বলেন, “গত ৯ দিনেও বিজিএমইএ ওই ভবনে যে কয়টি পোশাক কারখানা ছিল, সেসব কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের পুর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা প্রদান করতে পারেনি।”

জেলা প্রশাসকের পক্ষে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, পুলিশের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন উপ পরিচালক এবং উদ্ধারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৪২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৪ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়। এছাড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত মোট জীবিত মানুষ উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৩৭ জনে। সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকানের পাশাপাশি তৃতীয়তলা থেকে ওপরতলা পর্যন্ত ছিলো গার্মেন্টস কারখানা।  এগুলোতে কাজ করতেন কয়েক হাজার শ্রমিক।