সাভার থেকে: সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শুক্রবার রাত ১০টা পর্যন্ত ৩১৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৯ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য লাশগুলো হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৩৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হস্তান্তরের অপেক্ষায় থাকা লাশগুলো সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় রাখা হয়েছে। আহতদের নেওয়া হচ্ছে এনাম মেডিকেলে কলেজ ও হাসপাতালে। আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
দুর্ঘটনার ৩য় দিন শুক্রবার ৩২ জনের লাশ ও ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে আইএসপিআরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। এর আগে লাশ হস্তান্তর গণনার কাজে নিয়োজিত সাভার থানার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউল্লাহ রেজা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “উদ্ধারকৃত লাশ থেকে বেশি দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, সে রকম ২৬টি লাশ আঞ্জুমান মুফিদুলে পাঠানো হয়েছে। তবে অপেক্ষমাণ স্বজনের চেয়ে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা কম।”
তিনি জানান, অনেক স্বজন তাদের হারানো স্বজন ফিরে পেতে স্বপ্রণোদিতভাবে অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও এনাম মেডিকেল কলেজের দেওয়ালে নাম-ঠিকানা লিখে টানিয়ে রেখেছেন। স্বজনের আহাজারিতে শোকাহত সবাই। অনেক স্বজন স্বজনের সন্ধান না পেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। এদিকে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, শুক্রবার রাত পর্যন্ত জীবিতদের উদ্ধারে অভিযান চলবে। তার পর জীবিত আর কারো আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই শুক্রবারের পর থেকে কেবল লাশ উদ্ধার অভিযান চলবে। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতাল ও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এখনও ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন। এর আগে ঘটনার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ঘটনাস্থলে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, স্থানীয় সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদ। বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সাভারের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। শুক্রবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকান ছিল। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে ওপর পর্যন্ত কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা ছিল। এগুলো হলো-নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড।
ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে নয় তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান সাভারে। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহা্সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে গত নভেম্বর মাসে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশন্সে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়।