ঢাকা: দেশের ২০ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. আব্দুল হামিদ। বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত স্পিকার শওকত আলী রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদকে এ শপথ বাক্য পাঠ করান। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দ সহ উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার মো. আব্দুল হামিদকে (৬৯) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। রাষ্ট্রপতি আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আব্দুল হামিদ। এর আগে রোববার আওয়ামী লীগের সংসদীয় সভায় তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সংসদীয় দলের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আব্দুল হামিদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু আর কোনো মনোনয়নপত্র জমা না পড়ায় সোমবার সকালে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে আব্দুল হামিদকে বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
আব্দুল হামিদের আগে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আব্দুল হামিদ বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সাতবার কিশোরগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি এর আগে দুই দফায় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০ মার্চ ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর সংবিধান অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল হামিদ। ২৭ মার্চ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৯ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬১ সালে কলেজে পড়া অবস্থাতেই তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। এ জন্য তাকে কারাগারেও যেতে হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর আব্দুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর আব্দুল হামিদ ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন তিনি। ব্যক্তিজীবনে তিন ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।