সাভার থেকে: সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে শনিবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৩৫৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য লাশগুলো হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া শনিবার ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট জীবিত উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৪শ ৭৫ জনে।
রাতে আইএসপিআর-এর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান আইএসপিআর পরিচালক শাহীনুল ইসলাম। এদিকে, হস্তান্তরের অপেক্ষায় থাকা লাশগুলো সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় রাখা হয়েছে। আহতদের নেওয়া হচ্ছে এনাম মেডিকেলে কলেজ ও হাসপাতালে।এছাড়া শনিবার ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট জীবিত উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৪শ ৭৫ জনে।
এর আগে শুক্রবার আইএসপিআরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার ৩য় দিন শুক্রবার সারাদিনে শতাধিক জীবিত মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একজন জীবিত মানুষ ও লাশ থাকা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে। আমাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে। তবে অক্সিজেনের অভাব আছে। যেভাবে সুড়ঙ্গ করে আমরা প্রবেশ করছি, সেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী জীবিতদের উদ্ধারে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চলবে বলে জানান।
শনিবারও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে আপনজনের মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। আর জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে বেশির ভাগকে আহত অবস্থায় চিকিসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার পর্যন্ত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৭১ জনকে।
উদ্ধার কর্মীরা জানান, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের ভেতরে এখনো শুধু লাশ আর লাশ। আটকা পড়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনে প্রকৌশল বিভাগ, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রস উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সহযোগিতা করছে আনসার, র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাভার পৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকান ছিল।
ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে ওপর পর্যন্ত কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা ছিল। এগুলো হলো-নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড। ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে নয় তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান সাভারে। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গত নভেম্বর মাসে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়।