বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৩

সাভারে মৃতের সংখ্যা ১৭৫, চলছে উদ্ধার অভিযান

সাভার থেকে: সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ধসে পড়া রানা প্লাজার স্তুপ থেকে ১৭৫ টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মরদেহ সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালে রাখা মরদেহগুলোর নাম-পরিচয় দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হয়েছে হাজারেরও বেশি মানুষ। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে সাভার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আসাদুজ্জামান বাংলানিউউজকে এ সংখ্যা নিশ্চিত করেন। এছাড়া ১৩৩টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কথাও জানান তিনি। এর আগে সকাল ১১টার দিকে মৃতের সংখ্যা ১৫৫জনের  কথা জানিয়েছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী।


সকাল ১০টা নাগাদ ১০৯টি মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। হাসপাতাল ও বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনেরা। পরিচয় শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। এখনো ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।

উদ্ধার অভিযান শেষ করতে আরও ৩/৪দিন লাগবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষে জানানো হয়েছে।মর্মান্তিক এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪’শ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোনালিসা এ পর্যন্ত প্রায় ১হাজার ৫’শ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল দেখতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ঘটনাস্থলে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন(অব.) এবি তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, স্থানীয় সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদ।বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যাবার কথা রয়েছে।

বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির মালিক স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানা স্তুপের নিচে আটকে ছিলেন। পরে তাকে উদ্ধার করা হলে তিনি পুলিশের সহায়তায় এলাকা ত্যাগ করেন। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। রানা প্লাজার প্রথম ও দ্বিতীয় বিপণী বিতান এবং তৃতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা। এসব ফ্লোরে পাঁচটি কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। নবম তলার নির্মাণ কাজ চলছিল।

এদিকে, বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের জোর করে পোশাক কারখানায় হয়েছিল। তারা ভবনের ভেতরে প্রথমে ঢুকতে  চাননি। কারণ আগের দিনই ভবনটির পিলার ধসের ঘটনা ঘটে। ভবনধসের পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন-এ যেন আপনজন উদ্ধারের আন্তরিক প্রয়াস। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকল বাহিনীর ১০টি ইউনিট। উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য। সকালে ভবনধসের পরপরই আটকেপড়াদের বাঁচার আকুতি, বুকফাটা চিৎকারে মর্মস্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়। ধসেপড়া ভবনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে ছিল একেকটি হাত-পা। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন কেউ কেউ। অনেকের হাত-পা আবার নিস্তেজ।

এদিকে ভবন ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সারাদেশে জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে।ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। ফলে অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শোক পালনের এ ঘোষণা দেন।