নিউজডেস্ক : পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য জানাতে কানাডার আদালতে স্বেচ্ছায় রাজসাক্ষী হচ্ছেন দুদকের মামলায় অভিযুক্ত এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা। আদালতে তিনি পদ্মাসেতু প্রকল্পে ঘুষের ষড়যন্ত্র এবং নেপথ্যের অনেক কিছু খোলাসা করবেন। রোববার বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানায়। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুদকের মামলার কানাডিয়ান তিন আসামি হলেন, এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ এবং সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।
উচ্চ পর্যায়ের সূত্রটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ইসমাইল কিংবা রমেশের মধ্যে একজন রাজসাক্ষী হচ্ছেন। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, কানাডার আদালতে রাজসাক্ষী হচ্ছেন ইসমাইল। গত ৮ এপ্রিল কানাডার আদালতে পদ্মাসেতু দুর্নীতির বিচার শুনানি শুরু হয়ে ১৯ এপ্রিল শেষ হয়। এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ শাহ, মোহাম্মদ ইসমাইল ও কেভিন ওয়ালেস পদ্মাসেতু দুর্নীতির বিষয়ে কানাডার আদালতের মুখোমুখি হয়েছেন।কানাডার মনট্রিলের ফেডারেল আদালতে এ তিন জনের বিরুদ্ধে এর আগে মামলার শুনানির তারিখ ছিল গত বছরের ২৫ জুন। ওই দিন তাদের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী না থাকায় মামলাটির পরবর্র্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ৮ থেকে ১৯ এপ্রিল। রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ রমেশ শাহের ডায়েরির সূত্র ধরে রমেশ ও ইসমাইলকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। পরে অবশ্য তারা জামিনে মুক্তি পান। এ অবস্থায় তারা আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। দুদকের সূত্রটি আরও জানায়, অভিযুক্ত সাবেক লাভালিন কর্মকর্তা রাজসাক্ষী হলে সব বিষয় খোলাসা হবে। সাজা কম পাওয়ার আশায় তিনি রাজসাক্ষী হচ্ছেন বলেও সূত্র জানায়।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দিতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১২ শতাংশ ঘুষের অভিযোগ এসেছে। কাকে কতো শতাংশ ঘুষ দেওয়া হবে ডায়েরিতে তার একটি তালিকা করেছিলেন এসএনসি-লাভালিনের সাবেক কর্মকর্তা রমেশ শাহ। জানা গেছে, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ডায়েরির ওই পাতাটি কানাডা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ করেছে। বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, ডায়েরিতে সাংকেতিকভাবে প্রথমে লেখা রয়েছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম। এরপর লেখা হয়, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, নিক্সন চৌধুরী(হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ছোট ভাই), প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার নাম। পাঁচজনের নামই লেখা হয় সাংকেতিকভাবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে বাদ দিয়ে মোট সাত জনকে আসামি করে রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং-১৯) মামলা দায়ের করে দুদক। বিদেশি তিন আসামি ছাড়া বাংলাদেশের চার আসামি হলেন- সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসি’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা। পদ্মাসেতু দুর্নীতি মামলার অন্যতম দুই আসামি মোশাররফ এবং ফেরদৌসকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বিদেশি তিন আসামিই বর্তমানে রয়েছেন কানাডায়।