শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

দায়ী যে দলেরই হোক শাস্তি পাবে: প্রধানমন্ত্রী

নিউজডেস্ক : সংসদে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে ভবন ধসে হতাহতের ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে বলেছেন, “যারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের জোর করে কাজ করাতে বাধ্য করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে। দায়ী ব্যক্তি যে দলেরই হোক, অন্যায় করলে শাস্তি পাবে। আমার দলের হলেও শাস্তি পাবে। বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদে সাভারে ভবন ধসের ঘটনা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভবন মালিক রানা সাভার যুবলীগের নেতা নন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রানা নাকি যুবলীগ নেতা! আমি সাভার যুবলীগ কমিটির তালিকা নিয়ে এসেছি। সেখানে তার কোনো নাম নেই। তিনি দলের কেউ নন। দল ক্ষমতায় এলে অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দেন। দলের দোহাই দিয়ে কেউ রেহাই পাবেন না।”


শেখ হাসিনা বলেন, “ইতোমধ্যে এ ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে। একটি পুলিশের পক্ষ থেকে, আরেকটি করেছে রাজউক। আমরা গরিব মানুষদেরই রাজনীতি করি। তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। মানুষের জীবন নিয়ে খেলাকারী যেই হোক, তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দু:খজনক হলো, আগের দিনই ফাটল দেখা দেওয়ার পর পুলিশ বসিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ দিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনা হয়। কিন্তু বন্ধ করে দেওয়ার পরেও কি করে আবার শ্রমিকদেরকে ঢুকতে দেওয়া হলো? যেখানে একটি পিলার ভেঙ্গে গেছে, ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তার পরেও কিভাবে শ্রমিকরা কাজ করতে গেলেন?”

হরতাল প্রত্যাহার করায় বিরোধী দল নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “আজ উদ্ধার কাজ চলা অবস্থায় বিরোধী দলীয় নেত্রী সেখানে যান। তিনি যতোক্ষণ সেখানে ছিলেন, ততোক্ষণ উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী উদ্ধার কাজের বিষয়ে বলেন, “এতো অল্প সময়ে এতোগুলো মানুষকে উদ্ধার সহজ কাজ নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কাজ আর হয়েছে কি না আমার জানা নেই।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১ হাজার ৮০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ২১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৮০ জনের লাশ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। যারা মারা গেছেন, তাদের ফিরে পাবো না। যারা মারা গেছেন ও যারা আহত তাদের পরিবার যাতে অসহায় হয়ে না পড়ে সে ব্যবস্থা নেবো। আহতদের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ সময় লাগবে। চিকিৎসার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, আমরা তা করবো। ” 

তিনি বলেন, “ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সাভারে আমাদের সংসদ সদস্য মুরাদ জং, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ছুটে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আমি সেনাবাহিনী তলব করি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে পাঠাই। সার্বক্ষণিক তিনি সেখানে রয়েছেন।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঘটনার দিন হরতাল থাকায় উদ্ধার তৎপরতায় কিছু সমস্যা হয়। কোথাও হাত দিলে যদি আরেকটি ভেঙে পড়ে সে আশঙ্কায় সাবধানে কাজ করতে হয়। একটি টুকরা সরালেও আবার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “এ উদ্ধার কাজে আমাদের দমকল, সেনা, বিজিবি, পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। সাধারণ মানুষের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে। আটকে পড়াদের বাঁচিয়ে রাখতে আমরা বিমান বাহিনীর কাছ থেকে অক্সিজেন এনেছি। এসএসএফের কাছ থেকে সার্চ লাইট দিয়েছি। কংক্রিট কাটার জন্য কংক্রিট হ্যাকিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রী উদ্ধার অভিযানের কথা তুলে ধরে বলেন, “কারোর হাত আটকে গেছে, কারো পা আটকে রয়েছে। এ রকম অনেককে হাত কেটেও বের করা হয়েছে, যেন রক্তক্ষরণে মৃত্যু না হয়। তবু তার জীবনতো বাঁচাতে হবে।”

ধ্বংসস্তুপের কাছে জনগণকে ভিড় না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকে অতিরিক্ত আবেগ দেখিয়ে সেখানকার গাড়ি ও ভবন ভাঙচুর করছে। ক্ষতিতো আমাদের সবার। আপনারা শান্ত থাকুন।” উল্লেখ্য, বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত প্রায় ২ হাজার জনকে। তাদের মধ্যে সাড়ে সাতশ’ আহতকে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ভবন মালিক সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা পলাতক। ভবনটির ৩য় থেকে ৮ম তলায় ৫টি গার্মেন্টস কারখানায় ৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয় ও পিলার ধসে পড়ে। তা সত্বেও বুধবার সকালে তাদের জোর করে কারখানায় ঢোকানো ও কাজ করতে বাধ্য করা হয়।