নিউজডেস্ক : সাভারে ভবন ধস নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত বক্তব্যের পরিবর্তন করে তার অবস্থান পাল্টেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তথ্য বিকৃতির অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আমি বলেছি, সকাল সাড়ে আটটার দিকে হরতাল সমর্থনকারীরা তাদের তথাকথিত হরতাল বলবৎ করণের লক্ষ্যে সেই ইমারত প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে ভবনের কলামে ফাটল দেখা সত্ত্বেও ভবনের মূল ফটক, ফটক সম্বলিত কলামে ধাক্কাধাক্কি করেছিলেন, যেটা তারা না করলেও পারতেন। একটি দৃশ্যমান ইমারত যখন ভেঙ্গে পড়ছে, যখন ফাটল দেখা যাচ্ছে, তখন সেখানে গিয়ে এই যে কাজ করা হয়েছে- যেটা অমানবিক।’
সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “হরতালকারী ও মৌলবাদীরা এই ভবনের স্তম্ভ ধরে টানাটানি করায় ভবন ধসে পড়তে পারে।” তার এ বক্তব্যে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। রাজনৈতিক মহলসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মুখে মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দিয়ে হাস্যরসাত্মক মন্তব্য ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ধরনের একটি মারাত্মক দুর্ঘটনা নিয়ে এ ধরনের মন্তব্যে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন।
এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিব্রত সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু হাস্যকরই নয়, সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বক্তব্য দিয়ে তিনি সরকারকে সমালোচনার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন বলেও মন্ত্রী ও দলের নেতারা মনে করছেন। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য সরকারের জন্য লজ্জাজনক মন্তব্য করে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন।
এ ধরনের সমালোচনার মাঝেই তার বক্তব্যের আংশিক পরিবর্তন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, “কিছু পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যম কর্মীরা এ তথ্যটি বিকৃত করে বলেছেন, আমি নাকি বলেছি, বিরোধী পক্ষ হরতাল যারা করছে, তারা ধাক্কাধাক্কি করে তারা সে ভবন ভেঙ্গে ফেলেছে।” শুক্রবার রাতে শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) ২০১৩ সালের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচারের আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি আশ্চর্য হয়েছি এটা দেখে, যারা জনগণের আস্থায় না গিয়ে নিজেরাই রাজনীতিবিদ কিংবা সমাজবিদ হয়েছেন তারাও বলেছেন, এটা ঠিক নয়, সঠিক নয়। এ কথা যিনি বলেছেন তিনি সম্ভবত সুস্থ মস্তিকের অধিকারী নন। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করি।”
তিনি বলেন, “বিষয়টি আজকে উপস্থাপন করলাম এই জন্য, আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে, যার যেখানে যা কিছু আছে তা নিয়ে ছুটে গিয়ে সেই দুর্গত লোকজনকে উদ্ধার করা। সেখানে কোনো ব্যক্তি কিংবা সরকারের কোনো প্রতিনিধিকে নিয়ে গোষ্ঠীকামী স্বার্থ উদ্ধার করা অসততা।” মহীউদ্দিন খান অভিযোগ করে বলেন, “একটি বিশেষ দল কর্তৃক আহুত হরতাল এবং হরতালের আয়োজনে কর্মীরা আমাদের কাজে বাধা দেন। তারা যদি বাধা না দিতেন, তাহলে হয়তো আরো দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার কাজে সামাজিক প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হতাম।” তিনি বলেন, “উদ্ধার কর্মীরা, স্থানীয় জনগণ বিশেষত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্ধার কাজ আরো ফলপ্রসূ হতো যদি না এ ধরনের বাধা আসতো।”
ক্র্যাবের অভিষেক অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ, ক্র্যাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাভলু, সাধারণ সম্পাদক ইসারফ হোসেন ইসা প্রমুখ।