ঢাকা : জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা মামলার রায় ৩০ এপ্রিল ঘোষণা করা হবে। বুধবার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেছেন। শুনানিতে আসামির পক্ষে ছিলেন শুনানি করে ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক।
গত ১৫, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন করা হয় এবং ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় উপস্থাপন শুরু করা হয়। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক বলেন, ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ রাষ্ট্রপক্ষের ছিল না। তাছাড়া সে সময় এ মামলার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। যার ফলে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, মামলাটির দু’টি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে, অপরাধ সংগঠন। অপরটি হলো ষড়যন্ত্র। সশস্ত্র সেনা কর্মকর্তারা কারাগারে এসে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। অন্য একটি দল এসে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে তাদের মুত্যু নিশ্চিত করে। এঘটনা এ মামলার অপরাধের সংগঠনের দিক।
আর ষড়যন্ত্রটি হয় বঙ্গবভবনের এক বৈঠকে। সেখান থেকেই এ দুই দল সেনা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তাই এদিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
গত ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের লিভ টু আপিল আবেদন মঞ্জুর করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।
একইসঙ্গে ওই আদেশে দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। অন্যথায় এ দু’জনকে গ্রেপ্তারেরও নির্দেশ দেয় আদালত।
এছাড়া আপিলের সংক্ষিপ্তসার তৈরি করে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত। এ আপিল শুনানির ২৫ পৃষ্ঠার এক সারসংক্ষেপ গত ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগে জমা দেয়া।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।
এ নির্মম ও বর্বরোচিত ঘটনার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান যার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও এল ডি দফাদার আবুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এদের সবাই পলাতক রয়েছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।
এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেয়। রায়ে মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয় হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে।