বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩

সাভারে ধসে পড়া ভবনের ভেতরে হাজারো শ্রমিক, ৮০ লাশ উদ্ধার

সাভার : তাজরীণ গ্রার্মেন্টস ট্রাজেডির রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই ফের শ’শ’ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাভারের শিল্পাঞ্চল এলাকায়। সেবার ছিলো আগুন, এবার ধসে পড়েছে ভবন। সেই ধসে পড়া ভবনের ভেতরে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। এ পর্যন্ত ৮০ জনের লাশ উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাভারের ইউএনও কবির হোসেন। আর এ পর্যন্ত তিনশ’ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর (অপারেশন) মেজর মাহবুব। বুধবার সকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা নামের ওই ৮তলা ভবনটি ধসে পড়ে।

ভবন সংশ্লিষ্টদের হিসাবে, সব মিলিয়ে কয়েকটি গার্মেন্টসের সাড়ে ছ’হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন ভবনটিতে। ধসে পড়ার সময় ছিলো ‌উৎপাদনের পিক আওয়ার। তাই এখন পর্যন্ত ৭৩ জনের লাশ উদ্ধার হলেও শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা কতোতে গিয়ে পৌছায় তা এখনই বলা মুশকিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জোনের এডিসি মিজানুর রহমান তাই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা সেনা বাহিনী, দমকলের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে দুর্ঘটনা এতো ব্যাপক যে সর্ব সাধারণের সহযোগিতা ছাড়া ভালোভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়।”

ভবনটির ৭তম ও ৮ম তল‍ার ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেডের সুইং ফ্লোরের লাইনম্যান সামিউল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ভবনটির ৭তম ও ৮ম তলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করতো। ৩য় ও চতুর্থ তলায় ফ্যানটম টেক্সট লিমিটেডে কাজ করতো আরো দেড় হাজার শ্রমিক। আর ৭ম তলার ইথারপেক ফ্যাশনে কাজ করতে ছয় শ’এর মতো। সব মিলিয়ে তাই শত শত শ্রমিক হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এছাড়‍া ভবনটির স‍ামনে গড়ে তোলা ব্যাক ব্যাংকের একটি ভবনে আরো ৩০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা আটকা পড়েছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।    ব্যাংকটির কর্মকর্তা এনামুল ইসলাম বলেন, “ভেতরে অনেক লোক আটকে আছে। ফোনে তারা জানিয়েছেন, তাদের যেন উদ্ধার করা হয়।” তবে বহুতল ভবনটির ২য় ও ৩য় তলায় শপিং কমপ্লেক্স থাকলেও এখনো চালু না হওয়ায় ওই দুই ফ্লোরে বেশি মানুষ থাকার সম্ভাবনা কম। স্থানীয়রা বলছেন, মঙ্গলবারই ভবনটিতে ফাটল দেখা ‍গেলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি কেউই। বুধবার সকালে যথারীতি পোশাকশ্রমিকরা কারখানায় কাজ করতে আসেন। এরপরই তারা এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

জনতার ভিড়ে ব্যাহত উদ্ধার কাজ
উৎসুক জনতার ভিড়ে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে সাভারে ধসে পড়া ভবনে আটকে পড়া মানুষগুলোর। ধসে পড়া ভবনে আটকে রয়েছেন পোশাকশ্রমিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ। ভবনটিতে উদ্ধার কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৪টি ইউনিট, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস এবং সাধারণ মানুষ। চিকিৎসাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করছে সরকারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১০টি ইউনিট। কিন্তু ভবনের আশপাশে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে থাকায় উদ্ধার কাজ এবং উদ্ধার করে আহতদের হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে হিমিশিম খেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী বাহিনীর। সেনাবাহিনী, রেডক্রিসেন্ট এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিম ভবনের পাশেই ক্যাম্প করেছে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। সেখানে তারা মূলত প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। যেসব আহতের অবস্থা গুরুতর তাদের পাঠানো হচ্ছে সাভারের কাছাকাছি হাসপাতালগুলোতে। তবে স্থানীয় হাসপাতালগুলোও হিমশিম খাচ্ছে রোগির ভিড় সামাল দিতে। তবে সাধারণ মানুষের ভিড় কমলে উদ্ধার কাজ আরও দ্রুত গতিতে হতে পারে। বলে মন্তব্য করেছেন উদ্ধারকারীর টিমের সদস্যরা।

জরুরি রক্ত প্রয়োজন (ফোন নম্বর)
সাভারে বহুতল ভবন ধসে আহত হওয়া শ’ শ’ শ্রমিককে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল ৯টার দিকে ৮তলা ওই ভবন ধসের মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম ‍রুহুল হক। এছাড়া আরো সাড়ে সাতশ’ আহতকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর আহতদের চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পাঁচশ’ ব্যাগ রক্ত জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বলে বারবার মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। সাভারে ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে আহতদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজনিয়তার কথা জানান উদ্ধারকাজে নিয়োজিত সেনাদলের তত্ত্বাবধায়ক নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার্স কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দীও। সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে রক্ত সংগ্রহ করে রাখার আহ্বান জানান তিনি। আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রক্ত দিতে যোগাযোগ করুন: এনাম মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, সাভার, ঢাকা। মোবাইল: ০১৬৮১২১২৭৭৭ (রক্ত), ০২-৭৭৪৩৭৭৮-৮২