সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৩

নিয়োগ দুর্নীতি: খোকাসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

ঢাকা: অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) কর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাসহ ৫৫ জনকে আসামি করে একটি মামলার চার্জশিটের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার বিকেলে এ চার্জশিট অনুমোদন দেয় কমিশন। দুদকের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
সূত্র জানায়, অনুমোদিত চার্জশিটে মোট আসামির মধ্যে এ মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ আসামি এবং দুদকের তদন্তে পাওয়‍া নতুন আরও ৪২ জনসহ মোট ৫৫ জনকে আসামি করে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেবে দুদক। ২০১০ সালের ২৯ জুন দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ বাদী হয়ে খোকাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলা নম্বর ৬৪।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ ডিসিসির ১৩ কর্মকর্তা পরস্পরের যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে ২০০৬ সালে একদিনে ৪৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেন। এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদক মামলাটি দায়ের করে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি কর কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিসিসি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় তিন বছর পর ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর আবেদনকারীদের লিখিত এবং ১৮ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষার দিনই নিয়োগের কার্যপত্র তৈরি, নিয়োগপত্র প্রদান, বাছাই কমিটির বৈঠক ও নিয়োগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন দেখানো হয়। হাতে হাতে নিয়োগপত্র নিয়ে মনোনীতরা ওইদিনই চাকরিতে যোগ দেন বলেও রেজিস্ট্রারে দেখানো হয়। রেজিস্ট্রারে ১৮ ও ১৯ অক্টোবরের পৃষ্ঠায় কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকায় আরেকটি রেজিস্ট্রার খোলা হয়। একদিনের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ডিসিসির বিভিন্ন শাখায় নিয়োগ আদেশের অনুলিপি পৌঁছায় ২ মাস ৮ দিন পর ২০০৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদিকে ডিসিসির পদোন্নতিবঞ্চিত উপ-কর কর্মকর্তারা এই গণনিয়োগের পরদিন ১৯ অক্টোবর উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত নিয়োগের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেন।

নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে আছেন- বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার এপিএস আতাহার আলী খান, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও মহানগর বিএনপি নেতা এ টি এম মোস্তফা বাদশার ছেলে মো. সামী ফয়সাল, সূত্রাপুর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ও ডিসিসির সাবেক ডেপুটি মেয়র শামসুজ্জামান মিন্টুর ছেলে এ এস এম হাসানুজ্জামান, সূত্রাপুর থানা বিএনপির নেতা বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কর্মচারী ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি মো. আমানউল্লাহর ছেলে মো. খালেদ সাইফুল্লাহ এবং মহানগর বিএনপি নেতা মজিবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এজাহার অনুযায়ী, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ছাড়াও অপর আসামিরা হলেন- ডিসিসি’র সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইফুদ্দিন আহম্মেদ, সাবেক সচিব ও বর্তমানে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের ওএসডি আলমগীর হোসেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত, সাবেক প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরে মো. নূরুন্নবী, সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরে সাখাওয়াত উল্লাহ, সাবেক সহকারী সচিব বর্তমানে গবেষণা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, সাবেক সহকারী সচিব বর্তমানে উপর কর্মকর্তা অঞ্চল-৬ মজিবর রহমান, কর কর্মকর্তা বাজার শাখা-২ সামী ফয়সাল, কর অঞ্চল-৩ এর কর কর্মকর্তা এ,এস,এম হাসানুজ্জামান, বাজার শাখা-৩ এর কর কর্মকর্তা আতাহার আলী খান, কর কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) সাইফুল্লাহ। দুদকের তদন্তে পাওয়া নতুন আসামিরা হলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংস্থাপন শাখা-১ হিসাব বিভাগের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আলী মনসুর,সংস্থাপন শাখা-২ এর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মার্জিয়া বেগম, সংস্থাপন শাখার বস্তি উন্নযন বিভাগের গবেষনা কর্মকর্তা আফসানা আক্তার, সংস্থাপন শাখা-১ এর সাধারন প্রশাসন শাখার গবেষনা কর্মকর্তা ও সহকারী সচিব কামাল হোসেন, সংস্থাপন শাখার-২এর প্রকৌশল বিভাগের উপ সহাকারী প্রকৌশলী (পু) সাইদুর রহমানসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের হিসাব রক্ষক, মো. মনসুর আলী, মার্জিয়া বেগম, আপসানা আক্তার, কামাল হোসেন, মো. সাইদুর রহমান, মো. আশরাফউদ্দিন কবির, মো. জাহিদুল আমিন, ঝর্ণা আক্তার, আবু হেনা মো. মনজুরুল ইসলাম, এসএম আজিজুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ, মাসুমা আক্তার, আহম্মেদ মুশফিকুর রহমান, অসীম চন্দ্র দাস, রাসেল আহমেদ, সুলতানা রাফিয়া, শাহীন আহম্মেদ, রেহানা আক্তার, মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. হাসিবুল হাসান, এমএম আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, মিজানুর রহমান, মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন, মোহাম্মদ হানিফ, জামিন আহম্মদ, মুহাম্মদ শাহেদ আলী, মোহম্মাদ আব্দুল হাফেজ, মো. আবু নাসের, ফিরোজ আহম্মদ, মো. আনোয়ার হোসেন, শামীম আল মামুন, সাজেদা সুলতানা সীমা, মো. আব্দুল হান্নান, আসাদুজ্জামান, মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, এসএম নাহিদ বিন রফিক, কাজী মাহবুব রাব্বানী, মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, মো. তসলিম হোসেন, মনোয়ার হোসেন মিশু এবং মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম।