ঢাকা: জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলের জবাব দেয়নি জামায়াতে ইসলামী। গত ১১ মার্চ জামায়াতে ইসলামীকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে জামায়াতের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমরা রুলের জবাব দিইনি। মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় আছে।
তবে আমরা একটি আবেদন করবো।’ নতুন করে কোন বিষয়ে আবেদন করবেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হয়তো সময়ের আবেদন হতে পারে।’’ এদিকে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ মামলায় ইসির পক্ষে লড়বেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। গত রোববার ইসি এম কে রহমানকে নিয়োগ দেয়। সোমবার ওই আইনজীবীর কাছে ইসির বক্তব্য পাঠায় ইসি সচিবালয়। ইতিমধ্যে ইসি জামায়াত নিবন্ধনের বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা আইনজীবীর কাছে পৌঁছে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের আইন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। সোমবার এম কে রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘কাল (মঙ্গলবার) রিটের শুনানি হওয়ার কথা। কিন্তু হরতালের কারণে নাও হতে পারে।’’ বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদনটি করেন। এ আবেদনে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুল শুনানির জন্য ২০১১ সালে অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই বেঞ্চের বিচারিক এখতিয়ার পরিবর্তন হয়। এরপর কোনো পক্ষই রুলের শুনানি করার উদ্যোগ নেননি। ফলে, এটি আদালতের কার্যতালিকায়ও আসেনি। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার ও জামায়াত নিষিদ্ধের জোর দাবি ওঠায় ওই রুলের শুনানি শুরুর জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন রিটকারীদের অন্যতম সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। পরে প্রধান বিচারপতি ওই বিষয়টি শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের বেঞ্চ নির্ধারণ করেন। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে বিশেষ বেঞ্চ আবেদনটি বৃহ্ত্তর (লার্জার) বেঞ্চ গঠন করতে প্রধান বিচারপতির পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। এরপর ১১ মার্চ বৃহত্তর বেঞ্চ এ আবেদনের শুনানি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মূলতবি করেন। এবং এ সময়ের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলেন। রিট আবেদনে বলা হয়, চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন পেতে পারে না। জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে না। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না। জামায়াত একটি সাম্প্রদায়িক দল। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সাম্প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। আবেদনে আরো বলা হয়, নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষ পদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবেন না। আবেদনে আরো বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি রাজনৈতিক দলের শাখা। তারা স্বীকারই করে, তাদের জন্ম ভারতে। বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়েছে।