রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৩

‘গণজাগরণই ভোট দিয়ে সরকার বানায়’

ঢাকা: শাহবাগের গণজাগরণ সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের আহবায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন, “টক শো’তে যারা প্রশ্ন করেন, সরকার বেশি শক্তিশালী না শাহবাগ বেশি শক্তিশালী, আমি তাদের বলতে চাই, অবশ্যই শাহবাগের গণজাগরণ শক্তিশালী। কারণ, গণজাগরণই ভোট দিয়ে সরকার বানায়।” রোববার বাহাদুর শাহ পার্কের গণজাগরণ সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলমের বহিষ্কার দাবি করে ডা. ইমরান বলেন, “জামায়াত-শিবিরের এই ক্যাডার ও রাজাকারের দোসরকে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করুন। তিনি কিভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য থাকেন?” বক্তব্যের শুরুতে ইমরান বলেন, “সিপাহী বিপ্লবের স্মৃতিবহ বাহাদুর শাহ পার্কে বাঙালি জাতির প্রথম বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। আমরা সেসব শহীদদের স্মরণ করছি। আমাদের ২৭ দিনের যে আন্দোলন, তা সেসব অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার আন্দোলন।” তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি দাবি নিয়ে রাজপথে এসেছিলাম, তা হলো সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা। আপনারা জনগণ আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন, মাঠে এসেছিলেন। আজ তারা জনগণ ও সরকারের ওপরও আক্রমণ করছে।” রগকাটার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের এ আন্দোলনে যাদের সমর্থন রয়েছে, তাদের ১৯৭১ সালে হত্যা করা হয়েছিল। শহীদদের সমর্থনই আমাদের শক্তি।” টক শো’, প্রেস কনফারেন্সে কুৎসা না রটানোর আহবান জানিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপত্র ইমরান বলেন, “জামায়াত-শিবিরকে সাধারণ মানুষ বয়কট করেছে। তাই তারা সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আক্রমণ করছে, মন্দিরে আগুন দিচ্ছে। আমি এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা তৈরির দাবি জানাচ্ছি। এদের চিনে রাখুন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের যেমন বিচার হচ্ছে, তেমনি এদেরও বিচার হবে।” ৫ মার্চ যাত্রাবাড়ীর সমাবেশ, ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী পার্কের সমাবেশ সফল করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান তিনি। একই সঙ্গে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর নারীদের জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “এদিন একটি নারী জাগরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গণজাগরণ মঞ্চ নারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। নারীরাই এ সমাবেশ পরিচালনা করবেন।” নারী সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব নারী সংগঠনসহ প্রগতিশীল নারীদের অংশ নেওয়ার আহবানও জানান ডা. ইমরান এইচ সরকার। উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের গণআন্দোলনের ২৭তম দিনে রোববার অনুষ্ঠিত হয় বাহাদুর শাহ পার্কের গণজাগরণ সমাবেশ। এটি গণজাগরণ চত্বরের বাইরের ৪র্থ সমাবেশ। এর আগে রায়েরবাজার বধ্যভূমি, মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণজাগরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ গণআন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছে। প্রতিদিনই যেন বাড়ছে এ গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এ বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক। এর পর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ গণআন্দোলনে যোগ দেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।