ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, নিশ্চয়ই খালেদা জিয়ার পরিকল্পনা আছে কোনো মসজিদে আগুন দেওয়ার বা হামলা করার। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ কথা বলেন। মুন্সীগঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন,
“তার (খালেদা জিয়া) পরিকল্পনার ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করার জন্যই তিনি মসজিদে হামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “আমি আতঙ্কিত তার (খালেদা জিয়া) বক্তব্যে। আল্লাহই জানেন, তিনি (খালেদা) কোন মসজিদে আগুন দেবেন! হামলা করবেন, কত লোকের ক্ষতি করবেন!” সৈয়দ আশরাফ বলেন, “বাংলাদেশে কে নাস্তিক, কে আস্তিক, তার বিচার হবে হাশরের দিনে।” তিনি বলেন, “কে ধর্ম পালন করেন, কে ধর্ম পালন করেন না, তার বিচার হবে হাশরের দিন। উনাকে (খালেদা জিয়া) কি আল্লাহ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কে ধর্ম পালন করে, কে ধর্ম পালন করে না, কে আস্তিক, কে নাস্তিক তা দেখার!” তিনি এসময় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “খালেদা জিয়া শেষ বিচারের দায়িত্ব নিয়েছেন!” বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, “সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। উনারা (বিএনপি) প্রস্তুত থাকলে সরকারও আলোচনার জন্য প্রস্তুত।” তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতের রায়ের পর পুরনো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন অ্যারেঞ্জমেন্ট হতে পারে। কিন্তু অনির্বাচিতদের দ্বারা সম্ভব নয়!” সরকারবিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার নির্বাচিত সরকার। ফু দিয়ে এ সরকারকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগেও সরকার ক্ষমতা ছাড়বে না।” সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আলোচনার দ্বার সরকার খোলা রেখেছে। সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছে। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।” খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কিন্তু উনি (খালেদা) বলেন- আগে ওটা, আগে সেটা মানতে হবে। এত কিছু মেনে আলোচনা হয়না। আগের আমলের তত্ত্বাবধায়কের সুযোগ নেই, আগে যেটা ছিল। সংবিধানে সেটার সুযোগ নেই। নির্বাচিতদের দ্বারা সম্ভব, অনির্বাচিতদের দ্বারা সম্ভব না।” সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “আলোচনা হতে হবে শর্তহীন। আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে অনানুষ্ঠানিক করে তার পর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা হতে পারে।” বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী সংলাপের জন্য চিঠি পাঠানো হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “উনারা (বিএনপি) যেটা বলেছেন, সোনার পাত্রে করে বাড়িতে দিয়ে আসা, সেটা হবে না। ন্যূনতম বিষয়ে ‘এগরিমেন্ট’ হবে, তার পর আলোচনা। ছুলাছুলির জন্য তো আলোচনা নয়।” অপর এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “দেশে তৃতীয় শক্তি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।” সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, “খালেদা জিয়া শাহবাগের গণজাগণ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ বলেছেন। যাদের নিয়ে তিনি কথা বলেছেন তাদের উত্তর দেওয়াই যথেষ্ট।” তিনি বলেন, “খালেদা তাদের ‘আওয়ামী লীগ ঘরানার নাস্তিক’ বলেছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে আজ পর্যন্ত সেখানে (গণজাগরণ মঞ্চে) বক্তব্য দেওয়ার কোনোসুযোগ করে দেওয়া হয়নি। তারা যে সমাবেশগুলো করেছে, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধির বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করেনি কেউ। তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম হঠাৎ করেই তাদের চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছে, এমন অবস্থা ধারণ করেছে। স্ব স্ব উদ্যোগেই তারা মিলিত হয়েছে। তারা সহিংস কোনো ঘটনা ঘটায়নি। কারো বাড়িতে আগুন দেয়নি, মন্দির, মসজিদে আক্রমণ করেনি, কারো বিরুদ্ধে কটূক্তি করেনি।”সৈয়দ আশরাফুল বলেন, “খালেদা জিয়া সংসদে ও রাজনীতিতে আমার কলিক। তিনি দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার এ অশোভন বক্তব্য জাতি আশা করেনি। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে থাকি। কিন্তু প্রকাশ্য বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখি; মনে যত ব্যথাই থাকুক। এটাই সভ্যতা!” মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে জাতির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া বুধবার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা জাতির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। অনেকটাই আতঙ্কের!” সৈয়দ আশরাফ খালেদা জিয়াকে পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান, “৫ বছরের শিশু, ১১ বছরের মেয়ে যে তার মায়ের সঙ্গে গণজাগরণ চত্বরে এসেছিল, সে কি তবে নাস্তিক?” খালেদার এ বক্তব্যের জন্য তিনি লজ্জা প্রকাশ করে বলেন, “নতুন প্রজন্মের কাছে আমি লজ্জিত।” খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আসলে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নিজেকে এত নিচু করছেন। ক্ষমতায় যেতে তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি জেনে গেছেন তার পায়ের তলায় মাটি নেই। তিনি বুঝে গেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার ভরাডুবি হবে। এই কারণেই তিনি বেপরোয়া!” এসময় তিনি খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, “দেশ জাতিকে কলঙ্কিত করার কোনো অধিকার তার নেই। আমি তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তাকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।” সৈয়দ আশরাফ বলেন, “বিএনপি-জামায়াত মন্দিরের প্রতিমা ভাঙলো, আর খালেদা জিয়া লৌহজং গিয়ে আওয়ামী লীগের দোষ দিলেন! সেখানে উনার কিছু লোক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না! নারীরা ভয়ে মুখ ঢেকে ব্যানার নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের হামলার প্রতিবাদ করেছেন।” তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর থেকে আসার সঙ্গে সঙ্গে গৃহযুদ্ধের ডাক দিলেন। ‘গণহত্যা’র অভিযোগ করে শাহবাগের গণজাগরণকে আক্রমণ করলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সব হামলা জামায়াত করেনি। জামায়াতের একার এত শক্তি নেই, যদি বিএনপি তাদের সঙ্গে না থাকে! সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার এ দায় খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে।” আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, “২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ ঢোকার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রধামন্ত্রীরও একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, সেটা করা হবে। অরাজকতাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।” তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছেন- জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীকে আগামীতে নেওয়া হবে না। আসলে তিনি আরেকটি ওয়ান ইলেভেন ঘটানোর চেষ্টা করছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় জাতিসংঘ থেকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছিল, শান্তি মিশনে নেওয়া হবে না। কিন্তু, এবার সে সুযোগ নেই!” তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার এটা ন্যাক্কারজনক বক্তব্য। আসলে তিনি উস্কানি দিতে চাইছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃস্টি করে অরাজকতা তৈরি করতে চাচ্ছেন। এটা করে কোনো কাজ হবে না। জুজুর ভয় দেখিয়েই লাভ নেই। সরকার আগে থেকেই প্রস্তুত!” উল্লেখ্য, শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং গোয়ালীমান্দ্রা বাজারে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির দেখার পর এক সমাবেশে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, “আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। সরকার সেখানে তালা দিয়ে রেখেছে। মসজিদে ঢুকতে দেয় না। অন্যদিকে, নাস্তিকদের পাহারা দিয়ে রেখেছে। সরকার একদিকে মসজিদে তালা দিয়ে রেখেছে। আর অন্যদিকে নাস্তিক-নষ্ট প্রকৃতির লোকদের পাহারা দিচ্ছে।” এসময় তিনি আরও বলেন, “সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সে জন্য ইস্যু খোঁজে। এখন মন্দির ভাঙা শুরু করেছে। এরপর মসজিদও ভাঙতে পারে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”