রবিবার, ১০ মার্চ, ২০১৩

জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে করা রিট ফের প্রধান বিচারপতির কাছে

ঢাকা: জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট মামলাটি বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে বিশেষ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন ও ফরিদ উদ্দিন খান।
আদেশের পরে বেলায়েত হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘‘আদেশে আদালত বলেছেন, এ রিটে সাংবিধানিক ও আইনি বিষয় জড়িত। তাই আবেদনটি বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে।’’ বেলায়েত হোসেন আরো বলেন, ‘‘আবেদনটি রোববার কার্যতালিকায় আসার পর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সময়ের আবেদন করেন। তিনি আদালতে বলেছেন, কয়েকজন বিবাদী (জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল) কারাগারে। এছাড়া জামায়াত অফিসও বন্ধ। তাই সময়ের প্রয়োজন।’’ বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদনটি করেন। এ আবেদনে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে রুলটি বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরে ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তিত হয়ে যায়। ফলে রিট আবেদনটির ওপর আর শুনানি হয়নি। এ অবস্থায় গত মাসের শেষ দিকে রুল আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিতে প্রধান বিচারতির কাছে আবেদন করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ আবেদনটি শুনানির জন্য দেওয়া হয়। পরে গত ৭ মার্চ এ আদালত মামলাটি কার্যতালিকার এক নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর বৃহস্পতিবার হরতাল থাকায় শুনানি হয়নি। রোববার আবার শুনানির জন্য তালিকায় আসার পর আদালত ওই আদেশ দেন। রিট আবেদনে বলা হয়, চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন পেতে পারে না। জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে না। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না। জামায়াত একটি সা¤প্রদায়িক দল। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সা¤প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। আবেদনে আরো বলা হয়, নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষপদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবেন না। আবেদনে আরো বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি সংগঠনের শাখা। তারা স্বীকারই করে, তাদের জš§ ভারতে। বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়েছে।