ঢাকা : দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণে ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে মালয়শিয়া। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে মালয়শীয় প্রধানমন্ত্রীর অবকাঠামো বিষয়ক বিশেষ দূত এস সামি ভেলু এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এখন বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে মালয়শিয়া। বাংলাদেশ সম্মত থাকলে তারা চার বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন। ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে সেতু নির্মাণ ও নদী শাসন বাবদ মালয়শিয়ার মোট বিনিয়োগ হবে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার। টোল আদায়ের মাধ্যমে ২৬ বছরে এই অর্থ তুলে নেবে মালয়শিয়া। তাদের হিসাবে এই সময়ে পদ্মা সেতু থেকে নিট আয় হবে ৭৪৯ কোটি ডলার। সেতু নির্মাণের পর প্রথম পাঁচ বছর মালয়শিয়া বাংলাদেশকে কোনো অর্থ দেবে না। এরপর থেকে পরবর্তী ২১ বছর তারা বাংলাদেশের সঙ্গে লাভ ভাগাভাগি করবে। ওই সময় পর্যন্ত লাভের ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫২০ কোটি ডলার মালয়শিয়া নেবে। বাকি ৩০ শতাংশ বাবাদ বাংলাদেশ পাবে ২১৯ কোটি ডলার। এই সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য টোলের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী, লাভের ওপর কর দিতেও মালয়শিয়া রাজি বলে মালয়শীয় দূত জানান। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে এই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার কাজে সহযোগিতা দিতে চাই, যার মধ্য দিয়ে দেশের দুটি অংশ যুক্ত হবে।” এস সামি ভেলু বলেন, এই প্রস্তাবে সম্মত থাকলে বাংলাদেশ সরকার দ্রুত এ বিষয়ে চুক্তি সাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বলে আশা করছে তার দেশ। পদ্মা সেতু নির্মাণে গত ২১ ফেব্রুয়ারি মালয়শিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি যৌথ কার্যবিবরণী সই হয়। এর আগে গত বছরের ১০ এপ্রিল এই সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। একই বছরের ২৫ মার্চ মালয়শিয়ার মন্ত্রিসভায় পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে বিশ্ব ব্যাংকসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। কিন্তু এ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সে বছর সেপ্টেম্বরে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে। এ সময় পর মালয়শিয়া দেশের সর্ববৃহৎ এই নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে আগ্রহ দেখায়। এরপর গত বছরের জুনে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল এবং সেপ্টেম্বরে আবারো ফিরে আসার ঘোষণা এলেও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে টানাপোড়েনের মাঝে মালয়শিয়ার সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা এগোতে থাকে। সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ করে দেয়া হয়। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা এলেও মালয়শিয়া, ভারত ও চীনের অর্থায়নের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘে এ সেতু নির্মাণে প্রথমে ২৯১ কোটি ডলার ব্যয় ধরা হয়। তবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে তিন বছরে এ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা তুলে ধরে এ প্রকল্পে ৩০৫ কোটি ডলার ব্যয় হবে বলে জানান।