ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দীর্ঘদিনের ফসল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা করা হয়নি। ঐ সময়ের অত্যাচার বিদেশি বন্ধুদের বিচলিত করেছিল। আপনারা নিজ নিজ দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে পেয়েছিলাম আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন। আপনাদের এ ঋণ শোধ হবার নয়। রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় ৪ নেতার অবদান স্মরণ করেন। স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী সকল শহীদকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০’র নির্বাচনে জয়ী হলেও পাকিস্তান চাপিয়ে দেয় যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দেয় মুক্তিকামী জনগণ। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ৭১ এ যেমন সমর্থন পেয়েছিলাম, আজ ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আপনাদের সমর্থন পাবো তা বিশ্বাস করি। এ সংগ্রামে আপনাদের সমর্থন চাই। যেসব বন্ধু মারা গেছেন, অনেকের বয়স হয়েছে তাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতে অপরাধ করে শাস্তি না পাওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল আমরা তার অবসান ঘটাতে চাই। যে কোনো অপকর্মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।এজন্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার করে, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ অপপ্রয়াস বাংলার মানুষ মেনে নেয় নি, নেবেও না।বাংলার মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়।’ এর আগে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন(অব.) তাজুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখা বিদেশি বন্ধুদের ষষ্ঠ বারের মতো এ সম্মাননা জানালো বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বিদেশি বন্ধুদের হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের রেপ্লিকাসহ ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন(অব.)তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ডাকমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, বিমান পরিবহনমন্ত্রী ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সাংসদ ফজলে নূর তাপসসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মাননা গ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, প্রয়াত বাবার পক্ষে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর, প্রয়াত মালিক গোলাম জিলানির পক্ষে মেয়ে আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর, পাকিস্তানের আরেক মানবাধিকার কর্মী নাসিম আখতার, ভারতের শিবানী ঘোষ প্রমুখ। সম্মাননা জানানোর পরই শুরু হয় বক্তৃতা পর্ব। সম্মাননা প্রাপ্ত জাপানি সমাজকর্মী অধ্যাপক তোমিও নিজুকামি বাংলায় তার অনুভূতি প্রকাশ করেন। এসময় সোনার বাংলাকে তিনিও ভালবাসেন বলে উল্লেখ করেন। এমনকি বাংলাদেশ-জাপান অটুট সম্পর্কে আনন্দও প্রকাশ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিডিওচিত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশ বিশেষ দেখানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। পরে মুক্তিযুদ্ধে সম্মাননাপ্রাপ্তদের অবদান তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া। এ পর্বে সম্মাননা পান কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো, যুক্তরাজ্যের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসনসহ বেশ ক’জন বিদেশি বন্ধু। এদের মধ্যে কয়েকজন পাকিস্তানিও রয়েছেন। এবারও ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ এ দুই ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পাচ্ছেন কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো ও প্রয়াত সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড হ্যারল্ড উইলসন। ফিদেল কাস্ত্রোর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন কিউবার রাষ্ট্রদূত আবেলার্দো কুয়েতো সোসা। হ্যারল্ড উইলসনের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর ছেলে প্রফেসর রবিন উইলসন। আর ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয় ৬৭ বিদেশি বন্ধুকে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা নিজে, প্রয়াত বাবার পক্ষে পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর, প্রয়াত মালিক গোলাম জিলানির পক্ষে মেয়ে আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর, পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী নাসিম আখতার নিজে, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর পক্ষে তমাল ভট্টাচার্য সম্মাননা গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির পশ্চিমবঙ্গ শাখাকেও মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয়।