মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

‘মসজিদ-মন্দির পাহারা দিন’ : ডা. ইমরান এইচ সরকার

গণজাগরণ মঞ্চ থেকে: দাঙ্গা এড়াতে মুসলমানদের মসজিদে নামাজ পড়ে মন্দির এবং হিন্দুদেরকে মসজিদের নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। মঙ্গলবার বিকেলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে যাত্রাবাড়ীতে আয়োজিত গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ তিনি এ আহ্বান জানান। ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীরা যখনই বিপদে পড়েছে, তখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছে। আমরা মুসলমান ভাইদের বলছি, আপনারা মসজিদে নামাজ পড়ে মন্দির পাহারা দেবেন।
হিন্দু ভাইয়েরা মসজিদের নিরাপত্তা দেবেন। যাতে কেউ ধর্মীয় দাঙ্গা বাধাতে না পারে।” গত এক মাসের আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে ডা. ইমরান বলেন, “এ সময়ের মধ্যে আমরা অনেক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি। অনেক পুলিশ ভাই শহীদ হয়েছেন, অনেককে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের শরীরে শহীদের রক্ত বহমান। আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।” তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারবো। যেখানে ‘সংখ্যালঘু’ নামে কোনো শব্দ থাকবে না, হারিয়ে যাবে জঙ্গিবাদ।” ডা. ইমরান বলেন, “গণতন্ত্র মানে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, উপাসনালয়-বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া নয়। গত কয়েক দিনে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। তারা আমাদের আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলেছিল। কিন্তু সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। পরে তারা এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক লেবেল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে অনেক ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন অংশ নেওয়ায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় নেতাদের এটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।” ডা. ইমরান পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন সমাবেশ এবং ৮ মার্চ নারী দিবসে শাহবাগে নারী জাগরণ সমাবেশে সকলকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। সমাবেশে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেন। বিশেষ করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি প্রাণ দেয় যাত্রাবাড়ীকে। সমাবেশ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয় যাত্রাবাড়ীতে। পুলিশ-র‌্যাব এবং গোয়েন্দা সদস্যরা সকাল থেকেই নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দেন গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ এলাকা। বিভিন্ন ভবনের ছাদেও পুলিশ-র‌্যাব সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। সমাবেশে ছাত্রনেতারা তাদের বক্তৃতাকালে জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে অবিলম্বে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি তোলেন। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের হরতালের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দুপুরের পর থেকেই স্লোগান কন্যা লাকী এবং ঈপ্সিতার স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে যাত্রাবাড়ী। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের চলমান গণআন্দোলনের অংশ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি এক সমাবেশ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জাগরণ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। শাহবাগের বাইরে এর আগে রায়েরবাজার বধ্যভূমি, মতিঝিল, মিরপুর ও বাহাদুর শাহ পার্কে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যাত্রাবাড়ীর এই সমাবেশ এ ধরনের ৫ম জাগরণ সমাবেশ। বিকেল চারটার দিকে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে এ জাগরণ সমাবেশ শুরু হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা ও সানজিদা খানমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে যাত্রাবাড়ী। উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের গণআন্দোলনের ২৯তম দিন মঙ্গলবার। এই আন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন। প্রতিদিনই যেনো বাড়ছে এ গণজোয়ারে আসা মানুষের সংখ্যা। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শাহবাগ মোড়ে এ বিক্ষোভের সূচনা করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা এ গণআন্দোলনে যোগ দেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।