নিউজ ডেস্ক : রোববার সন্ধ্যায় শেষ হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা আঁকার কাজ। এর পরই শত শত মশালের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বাঙালি জাতির লড়াই-সংগ্রামের চিত্র। ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারে বর্তমানে আনন্দে উচ্ছ্বল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তরুণ শিক্ষার্থীরা! সেখানে দুই কিলোমিটার জুড়ে অঙ্কিত হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে দীর্ঘতম আলপনা। রাস্তার দুইপাশ ধরে উঠে আসছে ৪৭-এর দেশভাগের চিত্র থেকে আজকের ২০১৩’র শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলনের চিত্র।
তরুণ-তরুণীর দিনরাতের অক্লান্ত তুলিতে উঠে আসছে এই ভূখণ্ডের জাতিগোষ্ঠীর লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস।শনিবার মধ্যরাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আলপনা পৌঁছে যায় এক কিলোমিটারে। এরই মধ্যে আঁকা হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। গোলচত্বর এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। রোববার বিজয় দিবসের আলপনার কাজ শেষ হবে। শত শত মশাল জ্বেলে এই মহাযজ্ঞের উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আলপনা আঁকতে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী রেজা নূর মঈন বলেন, “৬৩০ ফুট গ্রিডিং আর চকিং করে টাইমলাইনে একাত্তরের বাকি দিনগুলো পার হয়ে আমরা এক কিলোমিটার রাস্তা শেষে বিজয় দিবসের জন্য নির্ধারিত গোল চত্বরে পৌঁছেছি।” “শরীরে ক্লান্তি থাকলেও মনে ছিল বিজয়ের কাছাকাছি চলে আসার আনন্দ!”- এমনটাই জানান তিনি। তিনি বলেন, “এমন অবস্থায় সহস্র ভাগের এক ভাগ হলেও বিজয় দেখেছি আমরা। ফিরে গিয়েছি ইতিহাসে, সামান্য হলেও অনুভব করেছি একাত্তরের ডিসেম্বরের দিনগুলো!” তিনি বলেন, “বিশ্বের দীর্ঘতম রোড পেইন্টিং রেকর্ডের জন্য নয়, এ রকম অমূল্য শিহরণ-জাগানিয়া অনুভূতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসকে অনুভব করার জন্যই কাজ করছি।” আরেক শিক্ষার্থী আদিত্য রায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “দুই কিলোমিটার লম্বা আলপনা আঁকছি আমরা। কিন্তু, অনেকেই অবাক হয়ে যাবেন যখন দেখবেন, রাস্তার দুইপাশ মিলিয়ে এ আলপনা আসলে প্রায় তিন কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ!” শনিবার রাতে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, দুই কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে বিশ্বের দীর্ঘতম রোড পেইন্টিং সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। শত শিক্ষার্থীর তুলির আঁচড়ে বিশ্বে একটি অনন্য অর্জনের পথে রয়েছে বাংলাদেশ। শিক্ষার্থী পদ্মশ্রী স্মিতা বলেন, “শত শত ছেলেমেয়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কাজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তাতে শুধু শাবিপ্রবিতে বিশ্বের দীর্ঘতম রোড পেইন্টিং সম্পন্ন হবে না, সেই সঙ্গে খুব দ্রুত বাংলার বুক থেকে মুছে যাবে সব যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির শেকড়।” শাবিপ্রবি গেট থেকে দুই কিলোমিটার সড়কে ১৯৪৭ সাল থেকে ইতিহাস দিয়ে এই আলপনা শুরু হয়েছে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০১৩ সালের গণজাগরণ থাকবে আলপনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলপনার মূল কাজ করছেন। তাদের ম্যাপ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়ক আলপনায় পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ছয় দফা দাবি, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হল থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, জেলহত্যা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন, গণআদালত ও শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে তরুণ প্রজন্মের চলমান আন্দোলন তুলে ধরছেন শিক্ষার্থীরা।