বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গভবনে উপচে পরা ভিড় : শ্রদ্ধা জানানো শেষে সিএমএইচে রাষ্ট্রপতির মরদেহ

ঢাকা: দুপুর ১টা ০৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতির মরদেহ নিয়ে আসা হয় বঙ্গভবনে। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন আসে পুষ্পসজ্জিত গাড়িতে। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকাবহ ভাবগম্ভীর পরিবেশে রাষ্ট্রপতির মরদেহ গ্রহণ করেন তারা। বঙ্গভবন মাঠে স্থাপিত মঞ্চে রাষ্ট্রপতির প্রতি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানান।

দুপুর দেড়টার দিকে ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানো শেষে বঙ্গভবনের মাঠে আনা হয় মরদেহ। প্রথমেই দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। এখানে শ্রদ্ধা জানান স্পিকারের পক্ষে ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা। বঙ্গভবন মাঠ থেকে মরদেহ নেওয়া হয় দরবার হলে।

১টা ৫০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান বিরোধী দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ। দরবার হলেই তারা শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা শেষে খালেদা জিয়া শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন।

এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ রাজনীতিবিদরা শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির মরদেহ রাখা হবে বঙ্গভবনের মাঠে। সেখানে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ রাষ্ট্রপতি  জিল্লুর রহমানের মরদেহে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।

বঙ্গভবনের একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে আরেক পাশ দিয়ে বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে সময়ের অভাবে সমবেত অসংখ্য মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি রাষ্ট্রপতিকে। রাষ্ট্রপতির মরদেহের পাশে সার্বক্ষণিক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতির ছেলেমেয়েরা।


বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধার পর সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির মরদেহ। বৃহস্পতিবার রাতে সিএমএইচের মরচুয়ারিতে রাখা হবে সদ্যপ্রয়াত রাষ্ট্রপতিকে। শুক্রবার সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতির মরদেহ নেওয়া হবে তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। এখানে আসমত আলী কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রপতির প্রথম নামাজে জানাজা। দুপুর সাড়ে ১২টায় ফের বঙ্গবভনে নেওয়া হবে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মরদেহ। সেখানে বিদেশিরা শ্রদ্ধা জানাবেন। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে মরদেহ নেওয়া হবে জাতীয় ঈদগাহে। সেখানে বাদ জুমা অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা। বেলা সাড়ে তিনটায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে, স্ত্রী আইভী রহমানের পাশে।


এদিকে, রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের প্রথম দিনটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর ঘটনায় মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই কার্যকর হয়েছে দিনের সাধারণ ছুটি। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এ ছুটি কার্যকর করা হয়। দেশের জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সকল ক্ষেত্রেই এ ছুটি কার্যকর ছিল। 

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার এ জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই সভাপতিত্বে বৈঠকে রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের সময় সকল প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এ সময় আনা শোক প্রস্তাবে বলা হয়, মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে একটি সংগ্রামী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। তার মৃত্যু রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।