ঢাকা: জনমতের চাপে, জনগণের আন্দোলনের মুখে সরকার আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। একথা বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার তিনিসহ আটককৃত তিন শীর্ষ নেতাকে মুক্তি দেওয়ার পর পার্টি কার্যালয়ে ফিরে ব্রিফিংয়ে একথা বলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। মুক্তিপ্রাপ্ত অপর দুই নেতা হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তবে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. জাহিদ হোসেনসহ আরও দেড়শতাধিক নেতা-কর্মী এখনো আটক রয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে।
ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে আটক অন্য নেতাদের মুক্তি দেওয়া না হলে হরতালের যে আল্টিমেটাম এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে তা বলবৎ থাকবে। তিনি বলেন, ‘‘বৃহঃস্পতিবারের মধ্যে তাদের মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ তারিখ হরতাল আসবে। স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিলিয়ে বলতে চাই, নেতাকর্মীদের নামে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি না দিলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হবে।’’ এসময় মির্জা ফখরুল বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান চালিয়ে শীর্ষ নেতাদের সহ অন্যদের আটক ও কার্যালয়ের নথিপত্র জব্দ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। বিএনপি’র কাউন্সিলের জন্য সংগৃহীত তহবিল লুট হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। ফখরুল বলেন, পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে বোমা ও ককটেল উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। বিএনপি অফিসে কোনো ককটেল থাকতে পারে না, এতে বিএনপি জড়িত নয়। ককটেলের রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না।’’ তিনি দলের প্রধান কার্যালয়ে অভিযানের সময়ে ক্ষয়-ক্ষতির একটি বিবরণও তুলে ধরেন। ফখরুল বলেন, ‘‘গতকাল(সোমবার) সমাবেশের শেষ দিকে পশ্চিম দিকের স্কাউট ভবনের সামনে সরকারের নিযুক্ত এজন্টরা বোমা ফাটিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে। এরপর অফিসে ঢুকে পড়ে। পুলিশ কলাপসিবল গেট ভেঙে অফিস তছনছ শুরু করলে বাধা দিতে যাই এবং জানতে চাই, কোন আইনে ভেতরে এসেছেন, ওয়ারেন্ট আছে কি? পুলিশ উত্তরে বলে, আপনার জানতে হবে না। আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাকে নিচে নিয়ে যায়, ফিরিয়ে এনে আবার আটক করে। এরপর অসংখ্য নেতাকর্মীকে আটক করে। মহাসচিবের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। সিনিয়র নেতাকর্মীদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। ’’ “জনমতের চাপে সরকার আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে” বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘‘সরকার নিজেরাই সংকট সৃষ্টি করে বিরোধীদলের উপর চাপিয়ে দিতে চায়” তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে তারা হামলা চালিয়েছিলো্। কিন্তু কোনো অগণতান্ত্রিক আচরণ আমরা করিনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি আমরা, সরকার করে না। তারা ন্যাক্কারজনকভাবে আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসে ভাঙচুর চালিয়ে নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’’ ব্রিফিংয়ের সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এর আগে আটক হওয়ার ১৯ ঘণ্টা পর ফের পার্টি অফিসে ফেরেন বিএনপি’র ওই তিন শীর্ষ নেতা। মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে ডিবি অফিস থেকে ছাড়া পান তারা। এরপরপরই তারা চলে আসে পার্টি অফিসে। সেখানে ফখরুল যখন ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে পার্টি অফিসের সামনে। পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার অভিযোগে সোমবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন থেকে এই তিনজনসহ ১৫৩ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে ফখরুলসহ সিনিয়র নেতাদের রাত কাটে ডিবি কার্যালয়ে। আটক অন্য নেতাদের নামে দ্রুত বিচার আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি মামলা দেওয়া হয়েছে।