ঢাকা: কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দিয়ে জামায়াত-শিবির প্রমাণ করেছে এখানে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নেই নাশকতা ঠেকানোর কার্যকর ব্যবস্থা। দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে জামায়াত-শিবির চক্র নাশকতা চালানোর পরই ট্রেন পোড়ায় কমলাপুরে। অন্যত্র স্টেশনগুলোতে যখন নাশকতা চলছিলো তখনও কমলাপুর স্টেশন নিয়ে বাড়তি সতর্কতার উদ্যোগ ছিলো না। টনক নড়েনি রেল পুলিশের। সোমবার প্রতিদিনকার মতো কমলাপুর স্টেশনে দায়সারা অবস্থানেই ছিলো রেল পুলিশ। আগুন লাগার কয়েক মিনিট পরে যাত্রীদের চিৎকারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে ‘আগুন লেগেছে’।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রেল স্টেশন সংশ্লিষ্ট উর্ধতনরাই। তবে তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এখানকার নিরাপত্তায় বসানো সিসি ক্যামেরাগুলোর অধিকাংশের অকার্যকারীতা নিয়ে। দেশের প্রধান এ স্টেশনে সিসি ক্যামরা থাকলেও তার অর্ধেকই ছিল বন্ধ! কিছু সিসি ক্যামেরা সচল ছিলো কিন্তু সেগুলোও সেদিকে ঘটনা ঘটে সেদিকের নয়। এ কারণে সোমবারের ট্রেনে আগুন লাগিয়ে সংঘঠিত নাশকতার চিত্র ধরা পড়েনি সিসি ক্যামেরায়। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর তাতে জন্মও দিয়ে নানা প্রশ্ন ও রহস্যের। এদিকে, ঘটনার একদিন পরেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি রেল মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কোনো ধরণের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলেই নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। রেল মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি গঠন করার ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়নি। সোমবার নোয়াখালী থেকে এসে বিকেলে কমলাপুর রেলস্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে থামে আন্তনগর উপকূল এক্সপ্রেস। যাত্রীরা যখন ট্রেন থেকে নামতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই স্টেশনের সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেদিকে গেলে উপকূল এক্সপ্রেসের পেছনের অংশে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। যাত্রীদের ‘আগুন আগুন’ চিৎকারের পর আসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, আগুন লাগার পরও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশসহ অন্যরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন নেভানো দেখছিলেন। মূল ফটকে তল্লাশি কিংবা দুষ্কৃতকারীদের স্টেশন থেকে খুঁজে বের করার কোনো তৎপরতাই দেখা যায়নি। উপকূল এক্সপ্রেসে বগি ছিল ১৯টি। সামনে ইঞ্জিন ও নয়টি বগি এবং পেছনে নয়টি বগি। আগুন লেগেছে মাঝের ১০ নম্বর বগিতে। ট্রেনটির যাত্রী নাইমুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নামার সময় জিআরপির কোনো তৎপরতা তার চোখে পড়েনি। বিকট শব্দ হওয়ার পর পরই সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি নোয়াখালী থেকে কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায় বিকেল চারটা পাঁচ মিনিটে। ট্রেনটি থামার তিন মিনিটের মধ্যেই এর ভেতরে বিকট শব্দ হয়। এর পরই মাঝবরাবর একটি বগি থেকে ধোঁয়া বের হওয়া শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো স্টেশন এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বিকট শব্দে যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। কমলাপুর স্টেশনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতিকে দায়ী করছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন তবে রেলমন্ত্রীর দাবী তারা তৎপর রয়েছে। রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘নাশকতা এড়াতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। রেল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে। জনগণের সহযোগিতাও প্রয়োজন।’ কমলাপুর স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত শিবির নাশকতা চালাচ্ছে বলে তিনি জানান। কমলাপুর রেল স্টেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছু একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার মতে, স্টেশনে ৩০টির বেশে সিসি ক্যামরা বসানোর প্রয়োজন হলেও বর্তমানে ক্যামরা রয়েছে মাত্র ১৬টি। এরমধ্যে ৮ থেকে ১০টি সিসি ক্যামরা চালু রয়েছে। সিসি ক্যামরা বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানাজার খায়রুল বাশার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ না থাকলে সিসি ক্যামরা বন্ধ থাকে এমনিতে চালু থাকে।’’ সিসি ক্যামরার মাধ্যমে অপরাধী সনাক্ত সম্ভব কি-না এটা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। কমলাপুর রেল স্টেশনে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সোমবার বিকেলে দুর্বৃত্তরা যে দিকটাতে নাশকতা চালিয়েছে সেদিকের ক্যামেরাগুলো বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে কমলাপুর রেল স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে কথা উঠলেও টনক নড়ে না যেনো রেল কর্তৃপক্ষের। দেশব্যাপী দুর্বৃত্তদের রেলে নাশকতার পরও কার্যত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষের। সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে এরই মধ্যে বলা হচ্ছে, দেশে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্পদ ধ্বংস করতে এক বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্ত্বরা। দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দফায় দফায় বিভিন্ন জেলায় নাশকতাও চালাচ্ছে তারা গত কয়দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি জেলার বিভিন্ন স্থানে লোকোমোটিভ, বগি, রেল লাইন এবং ফিসপ্লেট খুলে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে অন্তত চারটি।