ঢাকা: মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। আগামী সোমবার থেকেই মালয়েশিয়া সরকার ক্রমান্বয়ে কর্মীদের ভিসার নামের তালিকা (ভিসা উইথ রেফারেন্স-ভিডব্লিআর) পাঠাবে। এর মধ্য দিয়েই সরকারি ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর শেষ ধাপ শুরু হবে। নির্বাচিত কর্মীরা এ মাসের শেষে মালয়েশিয়া পৌঁছবে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খরচ বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন সময় কথা উঠলেও সে খরচ বাড়ছে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
নিয়োগকর্তাই লেভি (কর) দিয়ে দেওয়ায় খরচ ৪০ হাজার টাকাই থাকছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে জানুয়ারি মাসে সারাদেশ থেকে নাম নিবন্ধনের মাধ্যমে কর্মী বাছাইসহ স্বাস্থ্যপরীক্ষা, প্রশিক্ষণ সব সম্পন্ন করে সরকার। চূড়ান্ত তালিকার মধ্য থেকে সাড়ে সাত হাজার কর্মীর ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি, পাসপোর্ট জীবন-বৃত্তান্তসহ তালিকা অনলাইনে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সে তালিকা অনুযায়ী কর্মীদের পরিচয় ও দক্ষতা যাচাই করে সে দেশের সরকার। প্রথম দফায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ১১ হাজার ৭৫৮ জন প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত হন। ফেব্রুয়ারিতে সরকারি ভাবে নির্বাচিতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ১০ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করানো হয়। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মালয়েশিয়া সেল ৪ মার্চ থেকে নির্বাচিতদের চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো শুরু করে। এদিকে এ তালিকা পাঠাতে বিএমইটি কর্তৃপক্ষকে বেশ হিমশিম খেতে হয় বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়া সেলের পরিচালক নজরুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “ নিবন্ধন করানোর সময় ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে মিল না রেখে নাম নিবন্ধিত হওয়ায় এ সমস্যা পোহাতে হয়েছে। এ কারণে সব মিলিয়ে নাম ঠিকানা শুদ্ধ করে পাঠানোর জন্য বিএমইটির দিনরাত খাটতে হয়েছে।” বিএমইটি মহাপরিচালক বেগম শামছুন্নাহার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোকে গুরুত্ব দিতে আলাদাভাবে একটি সেল তৈরি করেছি। তারা দিন রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে সব কাজ শেষ করে চূড়ান্ত তালিকা কুয়ালালামপুরে পাঠিয়েছে। সেখানে সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ সপ্তাহেই ধারাবাহিকভাবে কর্মীদের ভিসার জন্য নামের তালিকা পাঠানো হবে। এরপরই আমরা ঢাকাস্থ মালয়েশিয়া দূতাবাসে কর্মীদের ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে বলবো। ২৭ মার্চ থেকেই কর্মী যাওয়া শুরু হবে বলে কথা আমরা বলেছিলাম, এখনো পর্যন্ত সে তারিখই চূড়ান্ত আছে।” মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কর্মীদের যে নামের তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। সোমবার থেকেই সেদেশ থেকে প্রতিদিন কর্মীদের নামের তালিকা আসবে। সেটি পাওয়ার পর কর্মীদেরকে মোবাইলে ম্যাজেসের মাধ্যমে তাদের পাসপোর্ট, বাকি টাকা (সাড়ে ৩৫ হাজার টাকা) ও পাঁচ কপি ছবি নিয়ে ঢাকায় আসতে বলা হবে। এরপর প্রথম দফায় যারা যাবেন তাদের ভিসার জন্য বিমানভাড়া জমার রশিদসহ মেডিকেল, ট্রেনিংয়ের কপি ও পাসপোর্ট ঢাকার মালয়েশিয়া দূতাবাসে জমা দেয়া হবে। ভিসা পাওয়ার পরপরই বিএমইটির ছাড়পত্র দিয়ে কর্মী পাঠানো শুরু হবে। ধারাবাহিক এই প্রক্রিয়া শেষ করতে মাত্র কয়েক দিনই যথেষ্ট বলে জানায় বিএমইটির মালয়েশিয়া সেল। মঙ্গলবার থেকেই ভিসার জন্য দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলেও জানা যায়। বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদসংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মার্চেই মালয়েশিয়াতে সরকারিভাবে পাঠানো কর্মীদের প্রথম ফ্লাইট যাবে। বাকি কর্মীদেরও ক্রমান্বয়ে পাঠানো হবে।” দীর্ঘ চার বছর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ রাখে মালয়েশিয়া। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টার পর গত বছরের ২৬ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া প্রথম দফায় বনায়ন খাতের জন্য দশ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠায়।