শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৩

রাষ্ট্রপতি নিয়ে প্রস্তাব পেলে আলোচনায় যাবে বিএনপি

ঢাকা : সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পেলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আলোচনায় বসতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সরকার যদি উপলব্ধি করে যে তারা একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে চান, তাদের দলের প্রার্থী করতে চান না সেক্ষেত্রে বিরোধীদলের কাছে প্রস্তাব দিলে আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে আলোচনা করতে এবং সহযোগিতা করতে সম্মত আছি।
পাশাপাশি পরিবর্তিত সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও সমন্বয় করে কাজ করতে পারবেন এমন ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে চায় তার দল। শনিবার রাতে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি বাংলা আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মোশাররফ বলেন, “বিএনপির একজন কর্মী হিসাবে আমি বলতে চাই আমরা প্রস্তাব করবো না। আমরা সরকার থেকে আশা করবো।” তিনি বলেন, “সরকার যদি উপলব্ধি করে যে তারা একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে চান, তাদের দলের প্রার্থী করতে চান না সেক্ষেত্রে বিরোধীদলের কাছে প্রস্তাব দিলে আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে আলোচনা করতে এবং সহযোগিতা করতে সম্মত আছি।” একই সঙ্গে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কেমন হবেন তার ধারণা দিতে গিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আসন্ন নির্বাচন যেহেতু আট দশ মাসের মধ্যে সেজন্য আগামী সরকার কে হবে কে আসবে আমি বলতে পারবো না। কিন্তু এমন একজন ব্যক্তিত্ব প্রেসিডেন্ট থাকবেন যিনি পরিবর্তিত সরকার হলেও তাদের সাথে সমঝোতা করে এবং সমন্বয় করে কাজ করতে পারবেন।” মোশাররফের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংলাপের আরেক প্যানেল আলোচক প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, “নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করবেন। তখন সকল দলই যদি তারা ইচ্ছা করেন মনোনয়ন নিতে পারেন। ড. মোশাররফের কথা শুনে আমি খুব আশান্বিত বোধ করছি যে তারাও এতে অংশগ্রহণ করবেন।” তবে এ জন্য বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানান তিনি। মসিউর বলেন, “এবং আমি আশা করবো তারা সংসদে যেয়ে তাদের তাদের সম্মতি বা দ্বিমত অথবা বিকল্প যদি কিছু থাকে সেটা বলতে পারেন। যদি রাস্তায় থাকেন তাহলে খুব শান্তভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তারা তেমন অবদান রাখতে পারবেন না।” তিনি আরো বলেন, “নির্বাচনের সময় ওদেরকে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের কাছে ওরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তাদের পক্ষ থেকে সংসদে তারা কথা বলবেন। যদিও এটা কারো আহ্বান আমন্ত্রণের উপর নির্ভর করে না, কারণ জাতির কাছে তারা দায়বদ্ধ যে সংসদে তারা তাদের পক্ষ থেকে কথা বলবেন।” সংলাপের অপর দুই প্যানেল আলোচক ছিলেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী এবং বাংলাদেশ উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেলিমা আহমেদ। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কেমন হবেন এমন ধারণা দিতে গিয়ে মাহি বলেন, “গ্রহণযোগ্য মানেই নিজস্ব দলের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হবেন না এমন কোনো কথা নেই। আওয়ামী লীগের ভিতরের দলীয় লোকও গ্রহণযোগ্য হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন।” আর দর্শকসারি থেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ড. মোহাম্মদ ইউনুস কিংবা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নাম প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আমরা যদি রাজনীতির বাইরের কাউকে নিয়ে এসে বসানোর চেষ্টা করি সমস্যা কিন্তু আরো বেশি হতে পারে। তাই একজন গ্রহণযোগ্য রাজনীতিবিদকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করতে হবে। এ বিষয়ে সংসদে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই- মন্তব্য করে সেলিমা আহমেদ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বিরোধী দলের এটি একটি বড় সুযোগ সংসদে যাওয়ার জন্য।” এদিকে হরতাল কিংবা অন্য যেকোনো কর্মসূচি পালনের সময়ে পুলিশ কী নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে পারে? দর্শকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ অভিযোগ করে বলেন, “এতে করে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।” গোলযোগ থামানোর জন্য গুলি ‘সর্বশেষ অস্ত্র’ হলেও বিনা উস্কানিতে তা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের নির্দেশে ইচ্ছাকৃতভাবেই এটা করা হয়েছে।” এ বিষয়ে মশিউর জানান, “প্রতিবাদের অধিকার সবার আছে কিন্তু সহিংসতা নয়।” “প্রতিবাদের যদি কোনো গ্রহণযোগ্য বিষয়বস্তু না থাকে এবং প্রতিবাদের যে মূল বিষয় তার যদি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সাংবিধানিক সমাধানের পথ থাকে সেটা যতসময় পর্যন্ত কেউ অনুসরণ না করবে তৎসময় পুলিশ বা অন্য কারোর উপর দোষ দিয়ে লাভ নাই।” পুলিশের ভূমিকায় অবশ্যই বাড়াবাড়ি হচ্ছে- মন্তব্য করে মাহি বি চৌধুরী বলেন, “কোনোভাবে কোনো অবস্থাতেই হত্যা সমর্থনযোগ্য নয়। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিলো এতে কোনো সন্দেহ নাই।” পুরো সংলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক আকবর হোসেন।