ঢাকা : দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে নিহতের দায় বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে, “তিনিই এই হত্যার জন্য দায়ী। এই যে রক্তপাত ঘটানো হলো এরজন্যও তিনি দায়ী। ধ্বংসাত্মক কাজের দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। তিনি যেটি চাইছেন তা হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবে না।” বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের জানমাল রক্ষায় সকল জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ডসহ সর্বত্র সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশের সকল মানুষকে আমি আহ্বান জানাবো প্রত্যেক এলাকায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলুন।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “যারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করছে তারা সংখ্যায় কম। তাই বোমাবাজি জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা করছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে স্বোচ্চার থাকতে হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষ, আলেম-ওলামা, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ সকলকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস প্রতিহত করতে হবে। যাতে তারা হত্যা করতে না পারে। দেশের স্বাধীনতা নষ্ট করতে না পারে।” খালেদা জিয়ার সিঙ্গাপুর সফর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে সংসদ নেতা বলেন, “তার সিঙ্গাপুর সফর নিয়ে আমরা সন্দিহান। তিনি অসুস্থতার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। কি ওষুধ খেয়ে এলেন আর কে সেই ডাক্তার? যে এসেই গলার জোর বেড়ে গেলো। এসেই যুদ্ধারপরাধীদের পক্ষে স্বোচ্চার হলেন। তবে চিকিৎসা যাই হোক শুনেছি সেখানে অর্থের লেনদেন হয়েছে। টাকা পেলে চাঙ্গা হতেই পারে।” সিঙ্গাপুরের অর্থের লেনদেন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার ছেলের পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে যখন পেরেছি তখন তারটাও খোঁজ নিতে পারবো।” সাম্প্রতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা। জামায়াতের ভোট এক শতাংশের কম। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। দেশের শান্তি চায়। বিরোধী দলীয় নেতা ও জামায়াতসহ গুটি কয়েক মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না।” প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, “যারা যতই নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করুক, মানুষ খুন করুক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবে না।” শিবিরের প্রতি উদ্দেশ্য করে সংসদ নেতা বলেন, “জামায়াত-শিবিরের নতুন প্রজন্ম যদি তাদের বাপ-দাদাদের অপকর্ম দেখে তবে নিজেরাই লজ্জা পাবে। তারা কি সেটা দেখতে পায় না? কাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে তারা। এ পথ থেকে তাদের সরে আসা উচিত। নিজেদের সর্বনাশ যেন নিজেরা না করেন, ভবিষ্যত যেন নষ্ট না করেন।” শেখ হাসিনা বলেন, “বিরোধী দলীয় নেত্রী দাবি করেন তিনি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তার স্বামী নাকি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আমার প্রশ্ন তিনি কিভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে তাদের রক্ষার চেষ্টা করছেন। নতুন প্রজন্মকে গাল দিচ্ছেন।” উল্লেখ্য, স্পিকার আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে বিকেল পৌনে চারটায় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বিরোধী দলের টানা ৭৫ দিন বর্জনের মধ্য দিয়ে চলতি নবম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশন বুধবার রাতেই শেষ হয়। এ অধিবেশনের কার্যদিবস ছিল ২৫টি। গত ২৭ জানুয়ারি শুরু হয় এ অধিবেশন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান শুরুর দিন সংসদে ভাষণ দেন। পরে এ ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আনেন চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ।