সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

নারায়ণগঞ্জে বিজিবি-পুলিশ সদস্যসহ নিহত ১৪

নিউজডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের ক্যাডারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন ও পুলিশের দুই জন সদস্য রয়েছেন। এছাড়া নিহত হয়েছে ১১ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, সকালে সংঘর্ষের পর নিহত অনেকের লাশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নিরীহ ব্যক্তি।

রাস্তায় লাশ
জানা গেছে, সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় মাদানীনগর মাদ্রাসায় অভিযান চালাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মাদ্রাসার ছাত্র, হেফাজতের কর্মী ও এলাকাবাসী। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা বিরামহীন এ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান অনেকে। দীর্ঘক্ষণ মহাসড়কের ওপরেই পড়ে ছিল তাদের লাশ। এতে বিজিবির একজন, পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো অন্তত তিনজনের মৃত্যুর গুঞ্জন থাকলেও এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কে লাশ পড়ে থাকা অবস্থাতেই সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে পুলিশ ও লোকজন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও একজন অজ্ঞাতপরিচয়। তবে এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা বলছেন, নিহতদের মধ্যে কেউ হেফাজতের কর্মী ছিল না। তারা নিরীহ ও সাধারণ মানুষ। কাজের উদ্দেশ্যেই তারা বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার মৃত হাশেম কন্ট্রাক্টারের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ফাহিমা ফ্যাশনের সেলসম্যান। সকালে দোকানে যাওয়ার পথে তিনি সংঘর্ষের পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। সিদ্ধিরগঞ্জের মা জেনারেল হাসপাতা অ্যান্ড ল্যাবে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

নিহত পথচারী পলাশ (২৫) মাদানীনগর এলাকায় তার গ্রিল ওয়ার্কশপের দোকান ছিল। বাসের হেলপার জসিম উদ্দিন (৩০) হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। তিনি মিজমিজি ধনুহাজী ঈদগাঁও এলাকায় থাকতেন। জাহিদুল ইসলাম সৌরভ (১৭) এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী বাঘমারা এলাকার এনামুলের ছেলে। পথচারী মাসুম (৩০) শিমরাইল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা হাসপাতালে মারা যান। হান্নান (৩৫) সিদ্ধিরগঞ্জের আল আমিন সোয়েটার ফ্যাক্টরির আয়রন বিভাগের ইনচার্জ ছিল। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা হাসপাতালে মারা যান। তুরাগ বাসচালক বাবু গাজী (৩৬) সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে সুগন্ধা হাসপাতালে মারা যান। তার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায়। ডেমরার পুর্ব বকসনগর এলাকার রইছ মিয়ার ছেলে সাদেক (৩২) দোকানে দোকানে ফিল্টার পানি সরবরাহ করতেন। রিকশাচালক হাবিবুল্লাহ (৩৪) চাঁদপুরের কচুঁয়া থানার জারচরা এলাকার আবুল মুন্সীর ছেলে। এছাড়া নিহত অপরজন হলেন ট্রাকের হেলপার মিজানুল হক।

নিহত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। অন্য সব মৃতদেহ আত্মীয়স্বজনেরা নিয়ে গেছে। এছাড়া দনিয়া কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র বাধন (১৭), ডেমরার রানী মহল এলাকার বাদল (১৭), ডেমরার ডগাইর এলাকার খালেদ (২৮) নিহত হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। তবে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিজিবি-পুলিশের তিন সদস্য নিহত
সংঘর্ষ চলাকালে এক পর্যায়ে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাতে থাকে লোকজন। এতে পুলিশ ও বিজিবির অন্তত ৫০ সদস্য গুরুতর আহত হয়। তাদের দ্রুত শহরের খানপুর ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, ১০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহত বিজিবি সদস্য হলেন নায়েব সুবেদার শাহ আলম (৫৫), পুলিশের নায়েক ফিরোজ (৩৫) ও কনস্টেবল জাকারিয়া (২৮)। এছাড়া সংঘর্ষে আহত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো চার সদস্য ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা হলেন সিপাহী লাবলু, এসআই (এবি) সোলেমান, কনস্টেবল পান্নু ও হারুনুর রশিদ। নায়েব সুবেদার শাহ আলমের, ব্যাচ নম্বর ৭০৭২। তিনি বিজিবি হেড কোর্য়টারে কর্মরত ছিলেন। পিতা মৃত মোশাররফ হোসেন, গ্রামের বাড়ি সুভলা, মির্জাপুর টাঙ্গাইল। নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন হাসান আনোয়ার, মমতাজুল, সোলেমান, জাকারিয়া, মাহবুব, ফিরোজ, তানভীর, মনির হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন, নাঈম। এদের মধ্যে জাকারিয়া ও ফিরোজ ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান। আহত বিজিবি সদস্যরা হলেন লাভলু, শাহ আলম, আবুল খায়ের, গুলজার, আলম এবং বিজিবির গোয়েন্দা শাখার আনোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে শাহ আলমকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তারা মারা যান। গুলিবিদ্ধ পথচারীরা হলেন ইমরান, সুমন ও মজিবুর রহমান, মাসুম, সালাউদ্দিন, মোজাম্মেল, আমিনুল।