নিউজ ডেস্ক: শ্রমিকের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও অধিকার সমুন্নত রেখে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৩’র চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে আইনে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার বিধান রাখা হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের একথা জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “যে সব প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০০ জন শ্রমিক রয়েছে সে সব প্রতিষ্ঠানে বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শ্রমিকের বীমা দাবির টাকা প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজ উদ্যেগে আদায় করবে এবং কোনো কারণে শ্রমিক যদি মারা যায় বা তার মৃত্যু হয় তাহলে তার পোষ্যদের বীমা দাবির টাকা মালিকদের আদায় করে দিতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে বীমা নিষ্পত্তির বিধানও রাখা হয়েছে।”
গত ২২ এপ্রিল এ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই সাপেক্ষে (ভেটিং) চূড়ান্ত করা হলো। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পার্টিসিপেটরি কমিটি করার বিধান রেখে এ আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। শ্রমিকদের গ্রাচুইটি সুবিধার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “নতুন আইন পাশ হলে কোনো শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ ১২ বছর হলে এক মাসের মজুরির সমান এবং ১২ বছরের বেশি হলে দেড় মাসের মজুরির সমান গ্র্যাচুইটি পাবেন।” মন্ত্রিপরিসদ সচিব বলেন, “শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রমিক নিযোগে আউট সোর্সিং কোম্পানিগুলোর জন্য নিবন্ধন করার বিধান রাখা হয়েছে।”মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, শ্রমিকদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা, গ্রাচু্ইটি সুবিধা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সেবা, শ্রমিক অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করতেই এ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন। এ আইনে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে দেওয়ার সুবিধার বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমান আইনে ট্রেড ইউনিয়নের নামের তালিকা মালিক পক্ষকে সরবরাহ করতে হতো, তবে নতুন আইন পাশ হওয়ার পর নামের তালিকা মালিক পক্ষকে দিতে হবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিবিএগুলো বিশেষজ্ঞ সহায়তা নিতে পারবে বলেও উল্লেখ রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শ্রমিকরা যে পরিবেশে কাজ করবে সেই পরিবেশের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা, প্রতিবন্ধকতা ছাড়া বহির্গমন পথ ও সিড়ি নিশ্চিত করার বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে।
রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল করার বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল করতে আলাদা বিধিমালার বিধান রাখা হয়েছে এবং এজন্য আলাদা একটি বোর্ড গঠন করা হবে। কারখানার স্টাকচারাল ডিজাইন ও ফ্যাক্টরি লে-আউট প্ল্যানের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কোনো প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত থাকলে সেখানে স্বাস্থ্যে সেবার জন্য ক্লিনিক থাকার বাধ্যবাধকতা থাকছে এবং শ্রমিক সংখ্যা এর কম হলেও স্বাস্থ্য সেবার বিকল্প ব্যবস্থা রাথার বিধান আইনে রয়েছে। আইন পাশের পর তা না মানলে শাস্তির জন্য বিভিন্ন বিধান রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।