রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

হরতাল ডেকে মাঠে নেই জামায়াত

ঢাকা: জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রভাব পড়েনি রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রায়। হরতাল শুরুর পর রোববার সকালের দিকে রাস্তায় যানবাহন কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। খুলতে থাকে দোকান পাটও। চাকুরেদের আগের হরতালগুলোর মতো যানবাহন সঙ্কটে পড়তে হয় নি।  
হরতাল ডেকে জামায়াত কর্মীরা মাঠে না থাকার কারণেই জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন,  হরতাল ছিল হেফাজতের। হেফাজত হরতাল প্রত্যাহার করে নিলেও নামকাওয়াস্তে হরতাল ডেকে বসে জামায়াত। কিন্তু তাদের হরতালকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।  এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতারও প্রশংসা করেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়  সরকারি- বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। খোলা রয়েছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,“হরতালে নাশকতা এড়াতে সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। যার কারণে এখন পর্যন্ত বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি দাবি করেন, “রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করায় হরতালে সাধারণ মানুষের তেমন সমস্যা হয় নি।” র‌্যাব-১০ এর মেজর আব্দুল্লাহ আল মামুন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “হরতালে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিই। তবে এই ব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ হরতালের মধ্যেও কাজকর্ম করেন।” তিনি বলেন, “আমাদের বাড়তি সতর্কতার কারণে হরতালে তেমন কোন বড় সহিংস ঘটনা ঘটেনি, জনজীবনও স্বাভাবিক রয়েছে।”

চট্টগ্রামের হরতাল পরিস্থিতি

বিচ্ছিন্ন কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ছাড়া রোববার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঢিলেঢালাভাবে চলছে। হরতাল উপেক্ষা করে নগরীর রাস্তায় নেমেছে প্রচুর গণপরিবহন। সকালে বন্ধ থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেছে দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সীমিতভাবে খুলেছে বিভিন্ন বিপণী বিতানও। হরতালের মধ্যেও বন্দরনগরীতে মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক আছে। তবে হরতালে নাশকতা মোকাবেলায় নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন আছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, হরতাল শুরুর পর সকাল ৮টার দিকে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় ডিসি হিলের সামনে শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা টায়ারেও আগুন দেয়। সকালে নগরীর দিদার মার্কেট এলাকায় একটি চলন্ত টেম্পুর সামনে ককটেল ছুঁড়ে মারে পিকেটাররা। এসময় ওই টেম্পুর যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নেমে যান। এতে ওই এলাকায় ‍আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া হরতাল শুরুর পর নগরীর বহদ্দারহাট, চাক্তাই চামড়ার গুদাম, জেল রোডসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এর বাইরে হরতাল চলাকালে নগরী এবং জেলায় বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মির্জা আবু সায়েম মাহমুদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘দু’এক জায়গায় দু’চার মিনিটের জন্য ঝটিকা মিছিল হয়ত করছে। কিন্তু রাস্তায় কোন পিকেটিং নেই। একেবারেই নিরুত্তাপভাবে চলছে হরতাল।’ নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হরতালে নাশকতা মোকাবেল‍ায় নগরীতে সাত সেকশন বিজিবি এবং প্রায় এক হাজার ৮’শ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।   নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আরেফিন জুয়েল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘হরতালের মধ্যে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও নগরীতে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলছে।’ ভোরে নগরীর নিউমার্কেট, কাজির দেউড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় সিটিবাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটোরিক্সা, টেম্পুসহ প্রচুর যানবাহন চলাচল করছে। রিক্সা চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক আছে। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল তুলনামূলকভ‍াবে কম দেখা গেছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে। হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামে সরকারী অফিস, সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প, কলকারখানা খোলা আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক আছে। তুলনামূলক কম হলেও পণ্যবাহী পরিবহনও বন্দরে আসা-যাওয়া করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়।