বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

কামারুজ্জামানের রায় পড়া চলছে

নিউজডেস্ক : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় পড়া শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫ এ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে নিয়ে আসার পর পাঁচ মিনিট পর বিচারকরা এজলাসে বসেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ দিয়ে মামলার ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে তুল ধরেন এই ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এরপর ১১টা ২১ মিনিটে  জনাকীর্ণ আদালতে রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যনালের সদস্য  বিচারপতি  মো. শাহিনুর ইসলাম। পুরো রায় ২১৫ পৃষ্ঠার হলেও এর সংক্ষিপ্ত সার ৬২ পৃষ্ঠার। এরপর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়বেন এবং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান চূড়ান্ত আদেশ দেবেন।

সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত কামারুজ্জামান আদালত কক্ষে প্রবেশের পর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা এজলাসে আসামির জন্য নির্ধারিত স্থানে চলে যান। এ সময় তার চুলগুলো তেল দিয়ে আঁচড়ানো দেখা যায়। তার মাথায় টুপি ছিল না। রায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিশিষ্টজনরা ট্রাইব্যুনালে আসতে শুরু করেন। সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে। আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলামও আদালতে পৌঁছান সকাল ১০টার দিকে।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে পৌঁছান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিরের সদস্যরা। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ খান তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা। বিরোধী দলীয় জোটের ডাকা হরতালের মধ্যে এই এদিকে রায় উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) ইমানুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর  ডটকমকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা, সরকারি কর্মজীবী হাসপাতাল মোড়ে বেরিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যকে সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়। ট্রাইব্যুনালে আসা আইনজীবী, সংবাদকর্মীসহ সবাইকে তল্লাশি করে আদালতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।

বৃষ্টির মধ্যে রায়ের অপেক্ষা
জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে জড়ো হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতাসহ বিশিষ্টজনরা। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধের এ মামলার রায় পড়া শুরু করেছে। রায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিশিষ্টজনরা ট্রাইব্যুনালে আসতে শুরু করেন। সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে।  ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলামও আদালতে পৌঁছান সকাল ১০টার দিকে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ অনেকেই ট্রাইব্যুনালের বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কামারুজ্জামানসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।  যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত রয়েছেন।

রায়ের অপেক্ষায় শাহবাগে জনতা

জামায়াত নেতা মো. কামারুজ্জামানের মামলায় রায় সামনে রেখে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে আবারো বিক্ষোভ করছে ছাত্র-জনতা। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মামলার রায়ের দিন ঘোষণার পরপরই শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর আবার জেগে ওঠে। তখন থেকেই শুরু হয় শাহবাগে টানা অবস্থান। যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে জাতীয় যাদুঘরের সামনের সড়কে সমবেত হয় কয়েকশ’ মানুষ। একাত্তরের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। বিক্ষোভ-সমাবেশের কারণে শাহবাগ থেকে টিএসসিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র শাকিল আহমেদ অরণ্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তারা গত রাত থেকে শাহবাগে অবস্থান করছেন। কাঙিক্ষত রায় না এলে আবারো রাস্তায় অবস্থান নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তিন মাস আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবি নিয়ে শুরু হয় শাহবাগে অবস্থান। মাঝে টানা অবস্থান না থাকলেও যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধের যে কোনো রায় ঘোষণার আগের দিন থেকেই শাহবাগে ২৪ ঘণ্টার টানা অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণাও আগেই ছিল তাদের।