রবিবার, ৫ মে, ২০১৩

পল্টনে অফিস-দোকানে আগুন, তাণ্ডব


নিউজডেস্ক : ঢাকা অবরোধ এবং সমাবেশের পর রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকাজুড়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা। এসময় ৭০ থেকে ৮০টি দোকানে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। রোববার সন্ধ্যার পর হেফাজত কর্মীরা আগুন দেয় বায়তুল মোকাররমের তিন দিকের ফুটপাতের দোকান, জুয়েলারি ও ব্যাংকের এটিএম বুথে। এমনকি ধর্মীয় বইয়ের দোকানে আগুন দেয় তারা। কোরান, হাদিসের বই, তসবিহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে এ মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুটপাতের দোকানিরা। সমস্ত এলাকাজুড়ে শোনা যাচ্ছে তাদের আহাজারি, কান্না। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ফুটপাতে থাকা বিভিন্ন স্টেশনারি, কাপড়, বই, জুয়েলারি, আতর, তসবির দোকানে আগুন দিয়েছে হেফাজত কর্মীরা। ভাঙচুরও করেছে অনেক দোকানে। জিপিওর কাছে সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত এসে প্রায় একঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

এদিকে, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে ফুটপাতের দোকানিরা। কষ্টে, আক্রোশে হেফাজতের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন তারা। ফুটপাতের একজন স্টেশনারি দোকানি শামীম  সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ভাই আমার সব শেষ হয়ে গেল। দোকানে আমার ৫০-৬০ হাজার টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে গেছে।” বায়তুল মোকাররম জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে র‌্যাংগস ভবনে থাকা কেএফসি, মোবাইল অপারেটর রবির কার্যালয়, কমিউনিস্ট পার্টির অফিস, হাউজ বিল্ডিংয়ের অফিস ভাঙচুর ও  অগ্নিসংযোগ করে হেফাজত।

মসজিদের নিরাপত্তা বলয়ে থেকে পুলিশের উপর ককটেল-বোমা

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে কেন্দ্র করে নিজেদের নিরাপত্তা বলড় গড়ে বলয়ের মধ্য থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা করেছে বিক্ষোভকারীরা। হামলায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ছাড়াও জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগ কর্মী ছাড়াও তাদের হামলার শিকার হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, এমনকি সাধারণ মানুষও। হতাহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তারা।

কথিত নাস্তিকদের শাস্তি দাবিসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধের দিন রোববার বিকেলে মতিঝিলে সমাবেশের অনুমতি পায় হেফাজতে ইসলাম। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তারা রাজধানীতে তাণ্ডব শুরু করে। বেলা ১২টা থেকে পল্টন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ দক্ষিণ গেট এলাকায় বিক্ষোভকারীরা উপুর্যপরি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তারা কৌশলে হামলা চালায়। তাদের কৌশলের কাছে প্রায়ই পরাস্ত হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীল সদস্যরা। ককটেল, হাতবোমা, ইটপাটকেল, পাথর, গুলতি ব্যবহার করা হচ্ছে হামলায়।

পল্টন মোড়ের কাছেই বায়তুল মোকাররম ও বিজয় নগরের রাস্তায় মাঝখানে ব্যারিকেড দিয়ে ও ফুটপাতের ক্ষুদে দোকানদারদের মালামালে আগুন দিয়ে তারা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। বায়তুল মোকাররমের রাস্তার দিকে বাসস, সিপিবি অফিসের সামনে আগুন দিয়ে তারা পথ রোধ করে। বিজয় নগরের রাস্তাও একই কায়দায় চলাচলের অনুপোযোগী করে ফেলে তারা। সিপিবি অফিস থেকে সন্ধ্যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হতে দেখা গেছে। তবে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হলেও আগুন নেভাতে পারে নি। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হামলাকারী এক শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন হেফাজতে কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানে আগুন দিয়েছে তারা।

শতাধিক হাতবোমা ও ককটেল দিয়ে পল্টনে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশের দু’টি এপিসি-তে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হলেও তাতে ক্ষতি হয়নি। তবে হাতবোমার আঘাতে আহত হয়েছেন মাসুদ নামের এক পুলিশ সদস্য। বিজয় নগরের রাস্তায় পুলিশের অপর এক সদস্যকে মাথায় লোহার বাট দিয়ে জখম করেছে বিক্ষোভকারীরা। তাকে গুরুতর অবস্থায় বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার চেষ্টা করে তারা। বিক্ষোভকারীদের মুহূর্মূহু ককটেল ও পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণ এবং পুলিশের রাবার বুলেট, টিয়ার সেল ও শটগানের গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে পল্টন, বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকা। রাজধানীর বিজয়নগরস্থ ট্রাফিক পূর্ব অফিসে (ডিসি অফিস) হেফাজত ইসলামের কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন পিয়ারুল ইসলাম(৩২) নামের একজন ট্রাফিক কনস্টেবল(নম্বর ৪২৮৬)। এসময় তিনি অফিসে কর্তব্যরত ছিলেন। আহত এ পুলিশ সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে বেলা প্রায় তিনটার দিকে আকাশে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহলের পর বিকেল ৫টার দিকে পল্টনে পুলিশের সঙ্গে র‌্যাব প্রতিরোধ তৈরি করলে তাদের সমন্বহীনতা এবং বিক্ষোভকারীদের কৌশলের কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খুব একটা সফল হয়নি।

বিক্ষোভকারীরা বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়। দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার গলিতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মোটর সাইকেল। অপর দিকে দুপুরের পর থেকেই পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, বিজয়নগর, দৈনিক বাংলা এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ থাকে যান চলাচল। রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় ভীতিকর পরিস্থিতি।