শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

নির্বাচন হতে হবে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই’: প্রধানমন্ত্রী

নিউজডেস্ক : নির্বাচনের সময় সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা করার বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে ‘সমঝোতায়’ আপত্তি নেই জানালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন হতে হবে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই’। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী, যার মধ্য দিয়ে কার্যত তিনি বিএনপির নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আবারো নাকচ করলেন।


সংলাপে বসার ক্ষেত্রে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার যে শর্ত বিএনপি দিয়েছে, তা ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। “ওইখানে যদি সমঝোতা করতে লাগে। আমি আগেই বলেছি, যদি সব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়েও একটি ইনটেরিম গভার্নমেন্ট করতে হয় আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমি চাইব, নির্বাচনটা গণতান্ত্রিক ধারায় হোক।”

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বিভিন্ন মহলে দাবি ওঠার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিরোধী দলীয় নেতাকে সংলাপের আহ্বান জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিয়ে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেলেই তারা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেবে। এর এক দিনের মাথায় গণভবনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সাভারে ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা এবং হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংলাপ ও বিরোধী দলের দাবি নিয়ে কথা বলেন তিনি।      
কবে নাগাদ সংলাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “সেটা যথা সময়ে দেয়া হবে। তবে দুঃখজনক যে, তারা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এভাবে শর্ত জুড়ে দেয়ার কোনো মানে নেই। মানে, শালিশ মানি, তাল গাছটা আমার।” সংলাপের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অ্যাকমোডেশন দরকার। আমি তো রিজিড হতে পারি না। আমি কখনোই রিজিড ছিলাম না। তবে, নীতির প্রশ্নের আপোষ নেই।” নির্দলীয় সরকারের দাবি নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো অসাংবিধানিক সরকার হবে না। যা হবে নিজেদের মধ্যে। আর অনির্বাচিত সরকার না।”

যুক্তরাজ্য, মালয়শিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে নির্বাচন হয় তা অনুসরণ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের শিডিউল হলে তো ক্যাবিনেট হয় না, সংসদে বৈঠক বসে না। তখন সংসদ থাকে না, ক্যাবিনেট থাকে না। সরকার তখন শুধু দৈনন্দিন কাজ চালায়- রাষ্ট্রপতির পরামর্শে।” প্রধানমন্ত্রী কতোটুকু পর্যন্ত ছাড় দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, “তত্ত্বাবধায়ক মেনে নিলে কী সংলাপের প্রয়োজন আছে? “কতোটুকু পর্যন্ত আমরা ছাড় দিতে পারব- তা আলোচনায় বসেই ঠিক করতে পারব।” বিরোধীদলীয় নেতাকে ইংগিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি তো ধরে বসে আছেন। বরফ তো গলছে না। উনি কি বুঝতে পারছেন- পরিণতি কী হতে পারে?” বিরোধী দলের হরতাল ও অন্যান্য কর্মসূচিতে ভাংচুর-বিস্ফোরণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “অমানবিক কাজ যেন বন্ধ করে- সেজন্য সংলাপ। মানুষ পোড়ানো থেকে যেন বিরত থাকে- সেজন্য সংলাপের আহবান জানিয়েছি। আমার কষ্ট হয়। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। ক্ষমতা আমার কাছে ভোগের বিষয় না।”

বিরোধী দলকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পার্লামেন্টে আসেন। একটা অন্তত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক। কবে কোথায় আবার এই অবস্থা আসবে?” নির্দলীয় সরকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুই নেত্রীসহ রাজনৈতিক শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের কথা মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আপনারা কি আবার ২০০৭ সালে ফিরে যেতে চান? সেই কথা মনে আছে কারো? ২০০৭ সালে আমি তো ফিরে যেতে চাই না। আমি জানি না বিরোধী দলীয় নেতা কেন চান? আমি বলতে চাই, এখন তেমন কিছু হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।”

বিরোধীদলীয় নেতা আবারো অসাংবিধানিক ব্যবস্থা আনতে চাইছেন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনার কী হবে? চিন্তা করে দেখেছেন? আমি তো খরচের খাতায়। ২১ অগাস্ট তো উনি আমাকে মারতে চেয়েছিলেন।” তারপরও ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে’ সংলাপ চান বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে যারা টেলিভিশন টক শোতে কথা বলেন, তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো গুলি বা বোম খেয়ে মরবো। বাবা-মা পরিবারের প্রায় সকলকে হারিয়ে আমার অবস্থায় থাকলে কেউ রাজনীতি করতো না। এই বিষয়টা আপনাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত।”

বিরোধী দলীয় নেতাকে ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উনি মনে করেন, লাশ ফেললে ঘটনা ঘটে যাবে। কোথা থেকে ঘটবে? উত্তর পাড়া থেকে। কারা ঘটাবে? পোশাকধারীরা। এখনো উনি ওই স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন।” অন্যদিকে গণতন্ত্রের জন্য নিজের পরিবারের দীর্ঘ সংগ্রামের কথাও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমি জাতির পিতার মেয়ে- এটাই আমার বড় পরিচয়। সেভাবেই আমরা চলি।”