শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

পোশাকশিল্পের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে : সিএনএন কে প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিরাজমান সমস্যা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। দোষীদের শাস্তির বিষয়ে অপরাধী অপরাধীই উল্লেখ করে আইন তার নিজ গতিতে চলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে সিএনএন’কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী তার চেষ্টার কথা জানান। নিউইর্য়ক থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাক্ষাতকারটি নেওয়া হয়।

গত ২৪ এপ্রিল ঢাকার অদুরে সাভারের `রানা প্লাজা` ধসে প্রায় ৫’শ পোশাককর্মীর মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে নানা `প্রতিক্রিয়া` ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পোশাক বিক্রেতা কয়েকটি সংস্থার `সতকর্তামূলক` অভিমত আসার পর আন্তর্জাতিক এ গণমাধ্যমের সঙ্গে পোশাক খাত নিয়ে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যদিও এখানে কিছু সমস্যা রয়েছে তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো সময় এখন।ভবন এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চত করতে এরইমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি যোগ করেন।

তিনি আরো বলেন, কমিটি তাদের রির্পোট মন্ত্রিসভা কমিটিতে জমা দেওয়ার পর পরিস্থিতি উন্নয়নে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে বলে এ সময় হাসিনা কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভালোমানের শ্রমিক রয়েছেন শুধুমাত্র সে জন্যই বিনিয়োগকারীরা এখানে আসেন না, এখানে সস্তা শ্রম পাওয়া যায় সে জন্যও আসেন।

ঢাকা ও এর আশপাশে প্রায় ১লাখ গার্মেন্ট কারখানার কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে মাত্র ১৮জন পরিদর্শক থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই কয়েকজন পরিদর্শকের ওপর নির্ভর করতে পারি না। রানা প্লাজা ধসের আগেই অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্রেখ করে এ বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া শ্রম আইনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। যা সংসদে উঠবে। হাসিনা বলেন, কর্মক্ষেত্রে বির্পযয় যুক্তরাষ্ট্রেও ঘটে থাকে। এ সময় তিনি গত মাসে টেক্সাসে সার কারখানায় বিস্ফোরণে ১৪জন নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের যে কোন জায়গায় যে কোন মুর্হূতে দুর্ঘটনা ঘটেতে পারে। আপনি তার ভবিষ্যতবাণী করতে পারবেন না।

এ সময় সাক্ষা‍ৎকার নেওয়া সিএনএন’র প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান আমানপোর বলেন, ভবনটির বিষয়ে স্থানীয় অফিস থেকে আগেই বলা হয়েছিল ধসে পড়ার আগের দিন (২৩ এপ্রিল)ভবনটিতে ফাটল ধরেছিল। তারা ভবনটিতে যেন কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয় সে বিষয়েও সর্তক করে দেওয়া হয়েছিল। উত্তরে হাসিনা বলেন, আপনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এই যে, ভবনটিতে অবস্থিত কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের জোরপূর্বক কারখানায় প্রবেশ করিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক নয় শ্রমিকদের ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয় নি। এ সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা যারা ভবনটি ধসের দিন (এপ্রিল ২৪)শ্রমিকদের পুনরায় ভবনে প্রবেশ করতে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি ঘটনার জন্য কারখানাগুলোর মালিকের পাশাপাশি ভবন মালিকেরও দোষ দেন এবং বলেন, আইন তার নিজের গতিতে চলবে। অপরাধী অপরাধীই। অপরাধীদের বিষয়ে তার সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি। জনগণের কাছে এটা আমার ওয়াদা বলেও জানান হাসিনা।

হাসিনা বলেন, কোন ব্যবসায়ী যদি কোন ধরনের অপরাধ করে থাকে তবে আমাদের সরকার তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। যে সব কোম্পানি এসব কারখানায় পণ্য তৈরি করেন তাদের উচিত কারখানাগুলোর মালিককে ভালো পারিশ্রমিক দেওয়া যেন তারা নিরাপদে ব্যবসা চালাতে পারেন।এ সময় তিনি ঘটনার জন্য তারাও কিছু অংশে দায়ী বলে উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, একটি ঘটনার জন্য আপনি পুরো ইন্ড্রাস্ট্রিকে দোষারোপ করতে পারেন না। তিনি বলেন, তার সরকার শ্রমিকের পক্ষে। এজন্য তারা শ্রমিকের নূন্যতম মজুরি ৮২ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের জন্য ডরমিটরির ব্যবস্থাসহ তাদের স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দিচ্ছেন।

 স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেওয়ার কারণ হিসাবে সিএনএন বলেছে, বাংলাদেশে প্রতিবেদক পাঠিয়ে  প্রতিবেদন তৈরি করতে চাইলেও বাংলাদেশ সরকার তাদের ভিসা দিতে রাজি হয়নি। সিএনএনের এক নির্বাহীর এই দাবির প্রসঙ্গ ওঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এটি সত্য নয়।" কোনো প্রচারমাধ্যমকে বাংলাদেশে আসতে বাধা দেওয়া হয় না। ভিসা অফিসের বিধিনিষেধ সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, "প্রত্যেক দেশেরই এসব বিধি বিধান রয়েছে।" উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এতে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৮৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে আড়াই হাজার শ্রমিককে। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ধসে পরা ভবনে ৫টি গার্মেন্ট কারখানা ছিল।