সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

যেখানে হেফাজতের ঘাঁটি, সেখানেই অভিযান : গ্রেফতার আতঙ্কে নেতাদের গা-ঢাকা

নিউজডেস্ক : হেফাজতকে আর কোনো ছাড় দেবে না সরকার। যেখানে যেখানে হেফাজতের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে, সেখানেই অভিযান চালাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সরকার এদের ব্যাপারে কোনো নমনীয়তা দেখাবে না বলে জানা গেছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরকারের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বলে সভা শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সুপরিকল্পিতভাবে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে হেফাজত এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটাতে পারে বলেও বৈঠকে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার হেফাজতের অবরোধের সময় রাজধানীতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তার সঙ্গে জড়িতদের ভিডিও ফুটেজ (চিত্র) দেখে গ্রেফতার করারও নির্দেশ দিয়েছেন বলে তারা আরো জানান।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ফুটপাতের দোকানে আগুন নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্থ হকারদের তালিকা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পিএসকে নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে যেখানে যেখানে হেফাজতের শক্তিশালী ঘাঁটি আছে সেখানেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অভিযান চালাবে। যাতে তারা আর এ ধরনের ঘটনা আর ঘটাতে না পারে সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, “বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া হেফাজতের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি জানেন না যে, হেফাজতের ভালো কোনো কাজ থাকলে তার ফল তারাই পেতো। আর খারাপ কাজ যেটা থাকবে সেটা বিরোধী দলের নেত্রীর ঘাড়ে যাবে। সেটাই হয়েছে।” সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সন্ধ্যায় হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফি কর্মসূচি সমাপ্তের ঘোষণা দেওয়ার জন্য শাপলা চত্বরের দিকে আসার সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফোন করে আরো এক দিন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। খালেদা জিয়ার অনুরোধে আহমদ শফি পলাশি থেকে ফিরে যান।

সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, মগবাজার থেকে কাকরাইল পর্যন্ত যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে জামায়াত-শিবির, বিএনপি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিডিও চিত্র দেখে এদেরকে চিহ্নিত করে মামলা দিয়ে ধরা হবে। এ কাজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে আল্লামা আহমদ শফিকে গ্রেফতার করা হবে না। তিনি বয়স্ক লোক, মুরুব্বি- এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হবে না বলে সভায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। মাদ্রাসার অল্প বয়সী ছাত্রদের যারা সংগঠিত করে এনেছে, পরিকল্পিতভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। এদিকে সরকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে আর কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেবে না বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। এই এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়। এ জন্য সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

সূত্র জানায়, শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযান সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সমাবেশে অল্প বয়সী যে সব ছাত্র রয়েছে তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আগে থেকেই বিশেষ নির্দেশ দিয়েছিলেন। হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।  এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সারা দেশের মানুষ আতঙ্কে ছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে।


গ্রেফতার আতঙ্কে হেফাজত নেতাদের গা-ঢাকা

গ্রেফতার আতঙ্কে গা-ঢাকা দিয়েছেন হেফাজত নেত‍ারা। তাদের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সোমবার রাত আটটার দিকে। রাতে আরো অনেককেই গ্রেফতার করা হবে বলে আভাস মিলছে গোয়েন্দা সূত্রে। এ পরিস্থিতিতে গ্রেফতার এড়াতে শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। লালবাগে হেফাজতের মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত মহানগর কার্যালয়েও সন্ধ্যার পর থেকে কোন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যাচ্ছে না। রোববার রাতে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির সাঁড়াশি অভিযানের মুখে শাপলা চত্ত্বর থেকে বিতাড়িত হওয়ার পরও দেশের বেশ কিছু স্থানে তাণ্ডব চালাচ্ছিলো হেফাজত কর্মীরা। বিশেষ করে তাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কাঁচপুর এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা।

এরই মধ্যে দুপুরের দিকে দলের আমির আল্লামা আহমদ শফীকে গ্রেফতারের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে শাপলা চত্ত্বরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে তাদের বহু নেতাকর্মী হতাহত হয়েছে মর্মে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় হেফাজত। এমন পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে আল্লামা আহমদ শফীকে আকাশপথে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ দ্রুতই প্রেক্ষাপট পাল্টে যেতে শুরু করে। ভাঙচুর, তাণ্ডবসহ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মামলায় বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবশ্য তার আগে থেকেই হেফাজত নেতারা গা-ঢাকা দিতে শুরু করেন। গ্রেফতার এড়াতে কেউ কেউ ঢাকা ছেড়েছেন বলেও জানা গেছে।

এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “মামলা থাকলে কেউ কেউ গ্রেফতার হতেই পারেন। এটা স্বাভাবিক। আমরা আইনের আওতায় সবকিছু করবো।”