শনিবার, ২৫ মে, ২০১৩

আজ নজরুল জয়ন্তী

নিউজডেস্ক : আজীবন ‘গন্ধবিধুর ধূপ’ হয়ে জ্বলা, সাম্য, প্রেম আর মানবতার কবি কাণ্ডারি ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো কাজী নজরুল ইসলামের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী আজ৤ বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের (১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দ) এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম। দুঃখ-দারিদ্র্যও ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ডাক নাম ছিল- দুখু মিয়া। বাবার অকাল মৃত্যুর পর অর্থকষ্টের কারণে শৈশবেই নজরুলকে অর্থ উপার্জনের জন্য জীবন-সংগ্রামে নামতে হয়। সেই বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজী পালোয়ানের মাজারে খাদেমগিরি ও মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। এতো সবের পরও দুখু মিয়ার জীবনে নিজ দুঃখ-ভাবনা স্থান পায়নি। তিনি ভেবেছেন, জাতির দুঃখ-ক্লেশ-দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর কথা।


কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন গত শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রসৈনিক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতায় নিজেকে জড়াননি। বরং স্বকীয় ধারায় তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুনের দিশারী করে তোলেন। পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে তার সৃষ্টি- কবিতা, গান ও উপন্যাস। বিদ্রোহী কবি পরাধীন ভারতবাসীকে স্বাধীনতার স্পৃহায় জাগিয়ে তুলতে আঘাত হেনেছেন ধূমকেতুর মতো। তার উচ্চারিত বিদ্রোহের পংক্তিমালা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দুন্দুভি বাদন আজো অক্লান্ত। তার কবিতা `চল্ চল্ চল্` বাংলাদেশের রণসংগীত। বাংলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক তিন সহস্রাধিক গানের রচয়িতা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি রচনা করেছেন নিজস্ব ধারার সঙ্গীত। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত কবি মানুষের সংকীর্ণতা, দীনতা, মূঢ়তা ও নীচতাকে ঘৃণা করতেন মনে-প্রাণে। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন নিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য কালজয়ী রচনা।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে ভারতের কলকাতা থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুলকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেন। পরে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র এই মহান ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন। তার গানের কথা অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হয়। কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করছে।