ডেস্ক রিপোর্ট : মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর পরই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবির কর্মীদের সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্যসহ মোট ৪৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুরে ৬, নাটোরে ১, নোয়াখালীতে ৫, দিনাজপুর ২, ঢাকায় ২, মোলভীবাজার ৩, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২, কক্সবাজারে ২, সাতক্ষীরায় ৫, গাইবান্ধা ৬, সিরাজগঞ্জে ২, ঠাকুরগাঁও ৫ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছে পুলিশসহ ৫ শতাধিক। এদের শতাধিক গুলিবিদ্ধ রয়েছে।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৩ পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে জামায়াত শিবিরকর্মীরা। অন্যদিকে শিবিরের ৩ কর্মীও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মুঞ্জর রহমান ৩ জন পুলিশ সদস্যকে জামায়াত শিবিরকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- বাবলু (২৮), নাজিম (৩০), হযরত (৩৫)।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের দফায় দফায় সংঘর্ষে দু’ শিবির কর্মী নিহত ও এক সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২০ জন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন। নিহত শিবির কর্মী নুরুল্লাহ খান ওরফে মুক্তা (২২) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের রাজা খাঁ চরে আলমগীর খানের এবং রুহুল আমিন (১৫) একই ইউনিয়নের চন্ডিদাসগাতী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। রুহুল আমিন সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং মুক্তা ঘটনাস্থলে মারা যায় বলে হাসপাতালের আরএমও ফরিদ আহম্মেদ ও স্বজনেরা জানিয়েছেন। আহতদের সদর হাসপাতালসহ শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা গড়েয়ায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরও ৫ জন। আহত হয়েছেন বিজিবি ও পুলিশের ৭ সদস্য নিহতরা হলেন- ছাত্রদলের মনির উদ্দিন (১৮) ও যুবদলের ফিরোজ (২৪), শিবিরকর্মী সুমন (২৫) ও রুবেল (২০) গ্রামবাসী মিঠুন (২৬)। গুলিবিদ্ধরা হলেন- জেমি (৩০), বিপ্লব (২৫), আমিনুল (২৮), দাইমুল (৩০)।
রংপুর: রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৮ পুলিশসহ আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক। পুলিশ ৩ জন নিহতের কথা স্বীকার করেছে। নিহতরা হলো- বালারহাট হুলাশু এলাকার মাহমুদল হাসান (২৮), মির্জাপুরের মশিউর রহমান(২৫), লতিফপুরের সাদেকুল ইসলাম(২৫) মাঠের হাটের আশিকুর রহমান (২২) এবং কাশিপুরের সাহেদ আলী(৪৩) মারা যায়। এছাড়াও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে একজন। তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, উপ পরিদর্শক (এএসআই) জুয়েল, কনস্টেবল আব্দুল আজিজ, লক্ষণ, রফিকুল ইসলাম, হিরু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, কল্লোল। পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ শতাধিক রাউন্ড গুলি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিজিবি ৪২ রাউন্ড গুলি করেছে বলে জানা গেছে।
সাতক্ষীরা: জেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে ৪ শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছে ৫ পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার হরিসপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন (১৭), খানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম (১৬), সদরের বেলেডাঙ্গা গ্রামের আবুল হাসান (২০), পায়রাডাঙা গ্রামের শাহীন (২০) ও সাতক্ষীরা সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুন (২৫)। আহতদের সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ডিএসবি ওয়াসার রিয়াজসহ ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
কক্সবাজার: সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর কক্সবাজারের জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- কক্সবাজারের ঈদগাহর বোয়ালখালী এলাকার হাজী ইলিয়াসের ছেলে রশিদ(৩৫)ও পেকুয়ার মেহেরনামা এলাকার জালাল উদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ (১৭)। এ সময় ১৩ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এতে ১৫টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, পেকুয়া উপজেলা এবং চকরিয়া উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড়লেখায় জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন জামায়তকর্মী ও অন্যজন শ্রমিক বলে জানা গেছে।
এদিকে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সারাদেশে শিবিরের ২১ নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, সিরাজগঞ্জে ও দিনাজপুরে দুইজন করে, রংপুরে সাতজন, ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচজন, কক্সবাজারে দুইজন ও চট্রগ্রামে তিনজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন আরো ৪৭ নেতাকর্মী। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের রুহুল আমীন, মোক্তার হোসেন, দিনাজপুরের হাসিনুর, রংপুরের মশিউর রহমান, মাহমুদ হাসান, আনোয়ারুল, শাকিল, সাদেক আলী, সাহেব আলী ও চট্রগ্রামের মেজবাহ উদ্দিন ও বাহার উদ্দিনের নামও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বৃহস্পতিবার সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৮ ও ১০নং অভিযোগে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এছাড়া ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯নং অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এতে কোনো সাজার কথা ঘোষণা করেননি ট্রাইব্যুনাল। বেলা ১১টা ১৯ মিনিট থেকে শুরু করে ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত রায় পড়া শেষ হয়। ১২০ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ সূচনা বক্তব্য পাঠ করেন বিচারক প্যানেলের সদস্য আনোয়ারুল হক। পরবর্তী অংশ পাঠ করেন বিচারক প্যানেলের অন্য সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর।