শাহবাগ, ঢাকা : নিউজডেস্ক : মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেওয়া ট্রাইব্যুনালের নমনীয় রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন শত শত প্রতিবাদী মানুষ। রায় প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির শাস্তির দাবি করছেন তারা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘ফাঁসি চাই’ স্লোগান শেষে একটি মশাল মিছিলও বের করা হয়। ব্লগার এক্টিভিস্ট ফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কিছু সংগঠনের ব্যানারে মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছে শাহবাগ মোড়ের এখানে সেখানে। টিএসসির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও অংশ নিয়েছে এ কর্মসূচিতে। ব্লগাররাও অংশ নেন এ কর্মসূচিতে। প্রতিবাদের অগ্নিশিখা হয়ে জ্বলছে শত শত মোমবাতি। বজ্রমুঠো স্লোগানে কম্পমান চারদিক। কণ্ঠে দাবি আদায়ের গণ-সঙ্গীত। তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে ক্ষোভ আর প্রতিবাদ। যেন জনস্রোত মিলিত হয়েছে এক প্রতিবাদী মোহনায়!। এতে যোগ দিয়েছেন মন্ত্রী থেকে রিকশাওয়ালা পর্যন্ত। এসেছেন কিশোর-তরুণ-বৃদ্ধ। নারী-পুরুষ সবাই এক কাতারে। আছেন শিক্ষক, আমলা, সংস্কৃতি কর্মী। সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে একটি স্লোগান- “এই রায় মানিনা, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। কোনো সংগঠিত অংশগ্রহণ নয়। কিন্তু সবার অভিন্ন অপ্রতিরোধ্য দাবিতে শাহবাগ যেন পরিণত হয়েছে, এক প্রতিবাদী ঐক্যমঞ্চে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষা করছিলেন কাদের মোল্লার ফাঁসির সংবাদের। কিন্তু প্রত্যাশিত রায় না পাওয়ায় সবার মধ্যে দেখা দেয় ক্ষোভ আর হতাশা। বিকেলে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক শাহবাগে এর প্রতিবাদ শুরু করলে ঢাবির শত শত শিক্ষার্থী স্রোতের মতো যোগ দেন কর্মসূচিতে। সবার দাবি, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন নয়, ফাঁসি চান তারা। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। আগামীকাল বুধবার আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা ও দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা অংশ নিয়েছেন আন্দোলনে। কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে শাহবাগে যোগ দিয়েছে ছাত্রলীগও। রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম দলের নেতা-কর্মীসহ টিএসসিতে গিয়ে এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। অংশ নেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ। এছাড়াও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ‘স্লোগান ৭১’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি প্রজেক্টরে প্রদর্শন করছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ও প্রতিবাদী গান। চারুকলার শিক্ষার্থীরা আঁকছেন প্রতিবাদী ব্যঙ্গচিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও যোগ দিয়েছেন এই আন্দোলনে। সন্ধ্যা থেকেই রাজপথ অবরুদ্ধ করে তারা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মসূচির এই পর্যায়ে কিছুক্ষণ আগেই তৈরি করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। সেই ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে কাদের মোল্লার প্রতীকী কুশপুত্তলিকা। কুশপুত্তলিকার গলায় ঘৃণাস্বরূপ শোভা পাচ্ছে জুতার মালা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনে এসে একাত্মতা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইন। তিনি বলেন, “আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, মহান সংসদের সদস্য এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। সব পরিচয় এবং দায়িত্ব নিয়েই আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আজ আইনের আদালতে কাদের মোল্লার যে রায় দেওয়া হয়েছে, তা জনতা মানে না।” তিনি বলেন, “আমি একজন মন্ত্রী হই আর যাই হই; আমিও জনগণের পাশে। আমিও এ রায় মানি না।”শাহবাগ চত্বর চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা অপরদিকে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক এবং মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রহমান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মঞ্জুরুল আহসান খান, সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণফোরামের পঙ্কজ ভট্টাচার্য, গণসঙ্গীত শিল্পী কফিল আহমেদ, চারুশিল্পী সব্যসাচী হাজরা, ৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও গণসঙ্গীত শিল্পী সিদ্দিক মোল্লা, বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসূফ, আওয়ামী লীগ এমপি আ. মান্নান। আন্দোলনকারীরা বুধবার সকাল ৭টায় সাধারণ মানুষকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। সেখান থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন। এসময় তারা দাবি করেছেন, কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় ও তা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা এই আন্দেলন চালিয়ে যাবেন।