শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, নিহত ১

ঢাকা: রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলো। সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় নগর ও জেলা শহরে জামায়াত-শিবিরের হামলা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, গুলি, বোমাবাজি, টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহে নিহত হয়েছে এক জন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ও ঝিনাইদহে ১৫ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সিলেট, রাজশাহী ও বগুড়ায় গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর দৈনিকবাংলা থেকে শুরু করে পল্টন, প্রেসক্লাব হয়ে হাইকোর্ট এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। এতে গুলিবিনিময়, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করায় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটে রাজধানীর কাকরাইল, বাংলামটর, কারওয়ানবাজার, মিরপুর ও পান্থপথ এলাকায়। প্রতিটি স্থানেই পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী, বগুড়া, গাজীপুর থেকে আসতে থাকে সংঘর্ষের খবর। এসব সংঘর্ষে শতাধিক আহত হওয়ার কথা জানা গেছে। সাংবাদিকরাও ছিলেন শুক্রবারের সংঘর্ষের অন্যতম টার্গেট। ঢাকায় ৭ জন ও চট্টগ্রামে ৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বায়তুল মোকাররম থেকে জুমআর নামাজের পরপরই জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো একটি মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে বের করে। পল্টনে পুলিশ তাদের বাধা দিলে জঙ্গি মিছিল নিয়ে বেরিকেড ভেঙ্গে শাহবাগের দিকে এগুতে থাকে তারা। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এরপর দুই পক্ষে গুলিবিনিময়েরও ঘটনা ঘটে। প্রেসক্লাব এলাকায় মিছিলটি  এগিয়ে গেলে এক পর্যায়ে মুহুর্মূহু গুলি বিনিময় চলতে থাকে। পুলিশের রাবার বুলেটের বিপরীতে জামায়াতের কর্মীরা হাতবোমা ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটাতে থাকে। এতে আহত হন ৭ সাংবাদিকসহ অনেকে। জামায়াত শিবিরের নেতৃত্বে মিছিলটি পুলিশের বেরিকেড ভেঙ্গে শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। কিন্তু হাইকোর্ট এলাকায় তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এদিকে কাঁটাবনেও অনেকটা একই সময় জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশের। এই সংঘর্ষে আহত হন শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ। পরে ঘটনাস্থল থেকে দুই জনকে আটক করে পুলিশ। একই ধরনের মিছিল বের করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে কাকরাইল, কাওয়ানবাজার ও মিরপুরে। এদিকে চট্টগ্রামের আন্দারকিল্লা এলাকায় জুমার নামাজের পর জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলোর মিছিল বের হয়েই পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়। এতে ৫ সাংবাদিক আহত হন। পুলিশের ওপর হামলা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াতের কর্মীরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় রাজশাহীতেও ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। জামায়াত কর্মীরা ব্যাপক বোমাবাজি করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। ভেঙ্গে ফেলে গণজাগরণ মঞ্চ। ঝিনাইদহে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সহিংসতার মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন নিহত হয়েছে। এসময় তিনজন সাংবাদিককে মারধর করা হয়। নিহত ব্যক্তির নাম আবদুস সালাম (৫৫)। জামায়াত দাবি করেছে, সালাম তাদের কর্মী। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে শহরের হাটের রাস্তায় জামায়াত-শিবিরসহ সমমনা ইসলামী দলগুলো মিছিল বের করে। সহিংসতার আশঙ্কায় পুলিশ এতে বাধা দেয়। এরপরও তারা মিছিল চালিয়ে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে ইসলামী দলগুলো। এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। সংর্ঘষে এখন পর্যন্ত ২০ জন আহত হয়। জু’মার নামাজের পর জঙ্গী মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের সামনে গণজাগরণ মঞ্চে ভাঙচুর চালায়। এতে গণজাগরণ মঞ্চের পাশে অবস্থিত একটি ব্যংকের এটিএম বুথও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বগুড়ায়ও জামায়াত শিবির কর্মীরা জুমআর নামাজের পর মিছিল নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালিয়ে তা ভেঙ্গে ফেলে। ঢাকার পাশে গাজীপুরের টঙ্গীতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই ঘটনা ঘটে যাত্রাবাড়িতেও। সেখানেও সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।