ঢাকা, ২১ জানুয়ারি : মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াতের সাবেক রোকন আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে আদালত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ সোমবার বেলা পোনে ১২টার দিকে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষনা করেন। রায়ে বলা হয়েছে, আযাদের বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগের মধ্যে ৭টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। আদালত নিজেই এ রায়কে ঐতিহাসিক হিসাবে বর্ননা করেছেন।
রায় প্রদান উপলক্ষে সকাল থেকেই আদালত প্রঙ্গণে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়ছে। আদালত প্রাঙ্গণে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা। রায় ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল চত্বরসহ রাজধানীজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রবিবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার সাংবাদিকদের সোমবার রায় দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচার শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটাই প্রথম রায়। ১২০ পৃষ্ঠার পুর্ণাঙ্গ এ রায়টি বিচারকরা পড়ে শোনাচ্ছেন। পুরো রায়টি পড়ে শেষ করতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। এদিকে পলাতক আবুল কালাম আজাদের রায় ঘোষণা উপলক্ষে পুরাতন হাইকোর্ট ভবন এলাকায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে রবিবার বিকেল থেকেই। বিপুলসংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের পর থেকেই বাচ্চু রাজাকার হিসাবে পরিচিত আবুল কালাম আযাদ পলাতক রয়েছেন।তার অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ শেষ হয়। আদালতে তার পক্ষে বক্তব্য পেশ করার জন্য ট্রাইব্যুনাল একজন আইনজীবী নিয়োগ করে। তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। স্বাধীনতার ৪১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরুর প্রায় ৩ বছরের মাথায় একটি মামলার রায় দেয়া হচ্ছে। এর আগে আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের ৮টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে-উল্লেখ করে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ। স্বাধীনতার পর কয়েক বছর পলাতক থাকেন তিনি। এরই মধ্যে পাঁচটি এনজিওর মালিকও বনে যান আবুল কালাম আযাদ। স্বাধীনতার ৪০ বছরের কোঠায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়। ওই সময় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আবুল কালাম আযাদ। তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ১০ ধরনের অপরাধের ৮টি ঘটনা নিয়ে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হচ্ছে, জোর করে ধর্মান্তরিত করা, দেশত্যাগে বাধ্য করা, লুট, ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ। ৭ অক্টোবর তার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হয়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২২ জন। গত ২৬ ডিসেম্বর মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। মামলার আসামি আবুল কালাম আজাদ পলাতক থাকায় অভিযোগ গঠনের মাত্র দেড় মাসের মাথায় এর বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়। আর অভিযুক্তর আইনজীবীও ট্রাইব্যুনালে একটির বেশি আবেদন দেননি। কোনো সাক্ষীও তার পক্ষে সাক্ষ্য দেননি।