শনিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩

২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : রাঙ্গুনিয়ায় প্রধানমন্ত্রী

রাঙ্গুনিয়া চট্টগ্রাম: নিউজডেস্ক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশকে এগিয়ে নেওয়া ও দেশের কলঙ্ক মোচনের জন্য আবারও নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করুন। আমাদেরকে আবার দেশের সেবা করার সুযোগ দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সোয়া চারটার দিকে বক্তৃতা শুরু করেন এবং ৪টা ৪৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হয়। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে আপনারা আমাদের ভোট দিয়ে ছিলেন। আমরা উন্নয়নের ধারা সূচিত করেছি। ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উন্নয়নের ধারা ‍অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করুন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন কিনা প্রশ্ন করলে জনতা হাত তুলে এতে সম্মতি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, `বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন ক্ষমতায় আসলে দেশের চেহারা বদলে দেবেন। তিনি আসলে আমরা যে উন্নয়ন করেছি সেসব উন্নয়ন কর্মকান্ড বন্ধ করে দেবেন। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের যে কর্মসূচি চালু করেছি তা বন্ধ করে দেবেন।` তিনি বলেন, `আমরা যেসব বন্ধ মিল কারখানা চালু করেছি সেগুলো আবার বন্ধ করে দেবেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। দেশে আবার সন্ত্রাস-দুর্নীতি ফিরে আসুক বিরোধী দলীয় নেত্রী এটাই চান।`প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের চার বছরের উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত চার বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছি। শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। শ্রমিকদের বেতন প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমাদের আমলে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করতে শুরু করেছে। পাসের হার ৪০ শতাংশ থেকে ৮৬ ভাগে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। আমরা যখন দেশের দায়িত্ব নিই, তখন দেশে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর তিন কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করেছি। আমরা বেকার যুবকদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তাদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক চালু করেছি। এ ব্যাংক থেকে বেকার যুবকেরা কোনো জামানত ছাড়াই ১ লাখ টাকা ঋণ পেতে পারে।  এছাড়া নিঃস্ব-অসহায় মানুষের জন্য আশ্রায়ণ প্রকল্প চালু করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গুনিয়ায় ৫০০ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগকে জনগণের সরকার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মানুষের জন্য কাজ করতে আর বিএনপি আসে দেশের সম্পদ লুটপাঠ করে খেতে। বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় ছিলেন। দুর্নীতি করে এত টাকা কামিয়েছেন যে তাকে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী আসলে  চান না আমাদের সন্তানেরা পড়ালেখা শিখুক। তিনি নিজে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উর্দু-বাংলা ও অংক ছাড়া আর কোনো বিষয়ে পাস করতে পারেননি। নিজের ছেলেদের পড়ালেখার জন্য সরকারের কাছ থেকে প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন। আমি প্রশ্ন করতে চাই, তিনি তার ছেলেদেরকে কী পড়ালেখা শিখিয়েছেন, কী ডিগ্রি দিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার ছেলেদের একজন মানি লান্ডারিং ও দুর্নীতির এবং আরেকজন ড্রাগ নেওয়ার ডিগ্রি নিয়েছেন। উনি যেহেতু পাশ করতে পারেননি,তাই আমাদের সন্তানেরা পড়ালেখা করুক তিনি তা চান না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বন্ধ কল-কারখানা চালু করেছি। কর্ণফুলী ফোরাত কার্পেট মিল ও কর্ণফুলী জুট মিল চালু করেছি। এই দু’টি কারখানায় দুই হাজার কর্মী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া গত চার বছরে ৪ লাখ লোককে সরকারী চাকরি দিয়েছি। তাদের এখন সুদিন ফিরে এসেছে। কৃষকদের জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষক ঋণ নিতে পারে এখন। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৫ হাজার স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেছি। সমুদ্র বিজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলায় জয়ী হয়ে সমুদ্রে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। এক লাখ ১১ হাজার ৬৭০ বর্গমাইল সমুদ্র জয় করেছি। নৌকা মার্কা জনগণের মার্কা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণ দেশের স্বাধীনতা পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে ভোট দিয়ে মানুষের আত্মসামাজিক উন্নতি হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ১৯৭১এ যারা আমাদের মা-বোনকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, গণহত্যা করেছিল, কোলের শিশুকে বেয়নেট খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল সেসব গণহত্যাকারীদেরকে রক্ত অর্জিত পতাকা তুলে দিয়েছিল বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে  তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণহত্যাকারীদের বিচার শুরু করেছে। রায় দেওয়া শুরু হয়েছে। একজনের রায় হয়েছে। ইনশাল্লাহ বাকী রায়ও পাব। বিএনপি ‍বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে কলঙ্ক লেপে দিয়েছিল তা গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে রাহুমুক্ত করব।